ক্যাম্পাসে ইতিবাচক রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেছেন, ‘ডাকসু যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যের হাতে বিশেষ ক্ষমতাবল থাকতেই পারে। যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতেই তাঁর এই ক্ষমতাবল। ডাকসুর নির্বাচিত নেতারা পরবর্তীতে যদি ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে উপাচার্যের একক ক্ষমতাবল থাকা জরুরী। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই বিশেষ ক্ষমতাবল থাকা উচিৎ।’
দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন নির্ধারিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তারিখ ও সময় ঘোষণার পর গতি পেয়েছে নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম। নড়েচড়ে বসেছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগসহ ক্যাম্পাসের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। নির্বাচনকে ঘিরে হল শাখা ছাত্রলীগের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় আসিফ তালুকদারের সঙ্গে। এ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
২৮ বছর পর ডাকসুর নির্বাচন, কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
আসিফ তালুকদার: এতদিন পর নির্বাচনটিকে আমি ইতিবাচক ভাবেই দেখছি। কেননা এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু না থাকায় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক স্থবিরতা এবং রাজনৈতিক চর্চার বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। ডাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ পাবে। ডাকসুর নির্বাচনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন খুবই আন্তরিক। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সুষ্ঠু পরিবেশে এবারের ডাকসু নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে এবং ২৮ বছর পর ডাকসু তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
এতদিন কেন নির্বাচন হয়নি বলে মনে করেন?
মূলত সামগ্রিক সমস্যার কারণেই ডাকসুর নির্বাচনটি হয়নি। এর জন্য নির্দিষ্ট করে কাউকেই দায়ী করা যাবে না। নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি কিংবা পরিবেশের দরকার ছিল, তার অভাবেই নির্বাচনটি হয়নি বলে আমি মনে করি। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু মানুষ অভিযোগ করে, ক্ষমতাসীন দল কিংবা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অনিচ্ছার কারণে ডাকসু নির্বাচনটি হয়নি। কিন্তু অভিযোগটা মিথ্যা। মিথ্যা না হলে এখন কিভাবে তাহলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সকল ছাত্র সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণেই এবার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টিকে স্বাগত জানাই।
নির্বাচনকে ঘিরে আপনার নিজস্ব পরিকল্পনা কী?
আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীদের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদেরকে নিয়েই ছাত্রলীগের প্যানেল গঠিত হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ছাত্রলীগ যে প্যানেল ঘোষণা করবে, দলীয় নির্দেশনা মেনে তাদের পক্ষেই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবো।
অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনই হলের বাইরে ভোটকেন্দ্রের দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
আমার জানা মতে, এর আগে যতবারই ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, তার কেন্দ্রগুলো হলেই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের দাবি রাখতেই পারে। তারা যদি কোন যৌক্তিক কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের কাছে ব্যক্ত করতে পারে তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো তখন ভেবে দেখতেও পারে। এটি একান্তই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা চাই গণতান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের নেতা নির্বাচন করুক, সুষ্ঠু পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনটা হোক।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে উপাচার্যের যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পাওয়ার আগেই কাউকে দোষারোপ করা কি যুক্তিযুক্ত? আমি মনে করি, ডাকসু যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যের হাতে বিশেষ ক্ষমতাবল থাকতেই পারে। যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁর এমন ক্ষমতাবল। ডাকসুর নির্বাচিত নেতারা পরবর্তীতে যদি তাদের ক্ষমতা নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে উপাচার্যের একক ক্ষমতাবল থাকা উচিৎ। বিষয়টিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আপনার হলে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কতটুকু সহাবস্থান রয়েছে?
ক্যাম্পাসে বামদলগুলো সদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ডাকসুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসেই তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদেরকে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। এবার আসি ছাত্রদল প্রসঙ্গে। বহুদিন ধরেই ক্যাম্পাসে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত তারা। সাংগাঠনিকভাবেই ছাত্রদল দুর্বল হয়ে পড়েছে, হারিয়েছে জনপ্রিয়তা। তারা ক্যাম্পাসে না আসলে আমাদের কী করার আছে? তাছাড়া ছাত্রদলের অনেক কর্মী কিন্তু নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কই আমরা তো তাদের বাধা দিই না। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় তারা যখন বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে তখনই তারা শিক্ষার্থী ও আমাদের দ্বারা প্রতিহত হয়েছে।
এবার হলের সহাবস্থানের বিষয়ে বলছি। জহুরুল হক হলে ৩০৫টা রুমে প্রায় ২০০০ ছাত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা রয়েছে, এটা আমি স্বীকার করি। জনপ্রিয়তা রয়েছে কিন্তু প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের কর্মী নয়। ছাত্রলীগের পাশাপাশি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদেরও উপস্থিতি আছে এখানে। এখন যদি বয়স্ক ও অছাত্ররা হলে জায়গা না পেয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত হচ্ছে না বলে দাবি করে তবে তা নিয়মিত শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসন স্বাভাবিকভাবে নেবে কি?
ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা কেন ছাত্রলীগের প্যানেলকে বেছে নেবে?
ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি, হামলা এগুলো ছিল একটা সময়ের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। পত্রিকা মেললেই এগুলোই চোখে পড়তো। বিগত সময় থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ডাকসুর অবর্তমানে ডাকসুর দায়িত্ব পালন করার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। ক্যাম্পাসে ইতিবাচক রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ছাত্রলীগের উদ্যোগেই। ছাত্রলীগ বরাবরই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের অধিকারের কথা বলেছে। শিক্ষার্থীদের চাওয়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। এই পরিবেশটা তো এখন ক্যাম্পাসে বিদ্যমান। এই শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রলীগের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এজন্য তারা আমাদেরকেই বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।