ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


ভ্যাট ফাঁকি রোধে দেশে আসছে নতুন যন্ত্র


৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৪৬

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৫

ভ্যাট ফাঁকি রোধে দেশে আসছে নতুন যন্ত্র

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট ফাঁকি প্রতিরোধে আসছে নতুন ব্যবস্থা। নতুন এই ব্যবস্থার নাম ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি)। যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের (ইসিআর) পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে। আর এটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সম্প্রতি জারি হয়েছে অধ্যাদেশ।

দেশের বাইরে থেকে আধুনিক এই যন্ত্র আমদানিতে আমদানিকারকদের তালিকাভুক্ত করতে হয়েছে টেন্ডারও। এখন চলছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর যাচাই-বাছাই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠান ইএফডি আমদানির লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে।

ভ্যাট ফাঁকি প্রতিরোধে ইএফডি একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসানোর পর এই মেশিনগুলো সরাসরি যুক্ত থাকবে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সঙ্গে। এনবিআরের কর্মকর্তারা অফিসে বসেই যন্ত্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এছাড়া এনবিআরে বসেই তারা মেশিনগুলোকে কার্যকর কিংবা অকার্যকর করতে পারবেন।

এনবিআর বলছে, ইএফডি চালু হলে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয় বাড়বে কয়েক গুণ।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমদানিকারকরা দ্রুত সময়ে লাইসেন্স পেলেও যন্ত্রটি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের ধারণা বছরের শুরুতে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চালু হবে নতুন এই যন্ত্র। তখন অহরহ দেখা মিলবে যন্ত্রটিরও।

জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) রেজাউল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইএফডি চালুর কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। কাগজে-কলমে ইএফডি নভেম্বর থেকেই কার্যকর হয়েছে। আর প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে আমদানিকারকদের জন্য টেন্ডারও হয়েছে। তবে, যন্ত্রটি আমদানি করতে চাইলে যে কোন প্রতিষ্ঠান এখনও আবেদন করতে পারবে।’

সারাবাংলার এক প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল হাসান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স পাওয়ার পর আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা দেখবো তারা কতো সংখ্যক ইএফডি যন্ত্র আমদানি করেছে। দেখা হবে স্বেচ্ছায় তারা কী পরিমাণ ইএফডি আমদানি করেছে। যদি সেটা উপযুক্ত মনে করা না হয় তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কারণ, আমরা দ্রুতই ইএফডি চালু করতে চাই। আর এটি করতেই হবে।’

এর আগে, ইএফডি বসাতে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিল এনবিআর। এ অর্থ বরাদ্দে অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেয়া হয়েছিল চিঠি। ওই টাকায় ১০ হাজার মেশিন কেনার পরিকল্পনা ছিল এনবিআরের। আর ওই মেশিনগুলো ক্রয়মূল্যে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহের কথা ছিল। তবে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এনবিআর। যন্ত্রটি সরকারিভাবে আমদানি না করে ছেড়ে দেয়া হয় বেসরকারি খাতে। ফলে আগে যারা ইসিআর আমদানি করতেন, তারাও আবেদন সাপেক্ষে যন্ত্রটি আমদানি করতে পারবেন। মূলত, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই প্রকল্পের বাইরে এসে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আবাসিক হোটেল, রেস্তোরা, ফাস্টফুড শপ, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রি কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টারসহ অন্তত ১১ টি খাতে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ইএফডি মেশিন ব্যবহার না করে তাহলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে।

ভ্যাট আইনের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের অর্ধেক বা সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দিতে হবে। এ ছাড়া অন্তত ২০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তবে, দেশে পুরোপুরি ইএফডির প্রচলন বা যন্ত্রটি বাজারে পর্যাপ্ত না আসা পর্যন্ত আগের ইসিআর মেশিন ব্যবহার করা যাবে।

এদিকে, আগামী বছর নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের লক্ষ্য রয়েছে এনবিআরের। আর নতুন এই আইনটি কার্যকর করতে চাইলে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও ইএফডি দুটিই একসঙ্গে কার্যকর করতে হবে। সে লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে এনবিআর। ইতোমধ্যে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন (ই-বিআইএন) নেয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার। এগিয়ে চলছে ইএফডি আমদানির কাজও। কাজে গতি অনেকটাই মন্থর থাকলেও সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ বছরের শুরুতেই মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে দেখা মিলবে ইএডির।