যে কারণে ক্ষমা পাচ্ছেন শোভন-রাব্বানী!

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ হলেও আগাম সম্মেলন বা সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা এ কথা জানিয়ে বলেন, সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া বা শোভন-রাব্বানীকে পদ থেকে সরানো না হলেও তাদের ওপর ক্ষোভ কমেনি শেখ হাসিনার। তিনি মনে করেন, আগাম সম্মেলন বা দুজনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির ওপর কালিমা লেপন হবে এবং দেশজুড়ে আরও সমালোচনার ঝড় উঠবে। তাই শোভন-রাব্বানীর ওপর ক্ষুব্ধ হলেও সংগঠনের স্বার্থে তাদের ব্যাপারে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ এখনই নেবেন না শেখ হাসিনা। তবে তিনি তাদের সব ধরনের চাপেই রাখবেন। গত বছর ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার পর ৩১ জুলাই
শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সেদিন রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। তারপর দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও প্রায় ১০ মাস পর ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই বছরমেয়াদি নতুন এই কমিটি ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতও সৃষ্টি হয়। এরপর গত কয়েক মাস বিতর্ক পিছু ছাড়েনি শোভন-রাব্বানীর। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে নিকটঅতীতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে ওবায়দুল কাদের সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগ নিয়ে কথা বলেন। ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’ নিয়ে করণীয় জানতে চাইলে শেখ হাসিনা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারটা তিনিই দেখবেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টি দেখবেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, শোভন-রাব্বানী দুজনের ওপর প্রধানমন্ত্রীর যে আস্থা-বিশ্বাস ছিল তা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। শোভন-রাব্বানী ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও লিখেছেন। তাতেও তাদের ব্যাপারে অবস্থান বদলাননি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, ছাত্রলীগের আগাম সম্মেলন বা সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতাকে সরিয়ে অন্যদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলে ঐতিহাসিক এ ছাত্র সংগঠনটির গায়ে দুর্নাম লেগে যাবে। এবং দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এ দফায় পার পেয়ে যাচ্ছেন শোভন-রাব্বানী। কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন।
এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশের পর শীর্ষ দুই নেতাকে বাদ দেওয়া ও রাখা নিয়ে দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে ‘সিন্ডিকেট’খ্যাত ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা যুক্ত হয়েছেন বর্তমান নেতৃত্বকে হটিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের দিয়ে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। কারণ, শোভন-রাব্বানীর এই কমিটি নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, যারা আগের কমিটিগুলোর নিয়ন্ত্রক ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রলীগের ওপর প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার পর আওয়ামী লীগেরই অনেকে ‘সুযোগ’ নিতে চাইছেন। তারা আগাম সম্মেলন অথবা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে সংগঠন চালানোর অনুমতি চাইতেও শেখ হাসিনার কাছে গেছেন। তবে তাদের ‘না’ বলে দেন তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে কাদের পরবর্তী নেতা বানানো যায় তা নিয়ে মাঠেও নেমেছেন। এর অংশ হিসেবে তারা দুজনকে নিয়ে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।