প্রশাসনের সামনে ২০ চ্যালেঞ্জ

চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট ৮ মাসে ২০টি প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে কাজ করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। বিভিন্ন খাতের এসব চ্যালেঞ্জ মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছেন তারা। গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ৪৩টি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় এসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। বৈঠকে উপস্থিত এক সিনিয়র মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে রোহিঙ্গা, ঢাকা শহরের যানজট, অতিরিক্ত ওজন নিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল, সরকারি জমি দখল, বিআরটিএর সেবা প্রদান, মেট্রোরেল নির্মাণকালে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে বিভক্ত করার ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান। ঢাকা মহানগরীর বাস সেক্টর পুনর্গঠনের মাধ্যমে একক বাস কোম্পানি গঠন করে মহানগরীতে যাত্রীসেবা চালু করার বিষয়টিও চ্যালেঞ্জের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করার চ্যালেঞ্জও তাদের তালিকায় আছে।
২০ চ্যালেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরের শৃঙ্খলা রক্ষাকে। কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের আইনশৃঙ্খলা না মানার প্রবণতা রয়েছে। তারা মাদক ব্যবসা, মানব পাচার ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের মিশে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারের হিসাবে বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। সরকার তাদের ভাসানচরে পাঠানোর নানা উদ্যোগ নিলেও তারা সেখানে যেতে চায় না।
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে মহাসড়ক নেটওয়ার্ক নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ও জনদুর্ভোগ হচ্ছে। অতিরিক্ত ওজন বহনকারী যানবাহন দুর্ঘটনারও অন্যতম কারণ। এই অতিরিক্ত ওজন বহনকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনেক জমি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে। এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে সরকারি জমি উদ্ধার করা হলেও আদালতের মাধ্যমে সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করা হয়। এতে মহাসড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ গঠন করা হয়। উভয় বিভাগের মধ্যে কাজের দ্বৈততা ও ধারণাগত ত্রæটি রয়েছে। অ্যালোকেশন অব বিজনেসে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অফিসারদের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে দেখানো হয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণসহ সার্ভিক বিষয়ে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা (টিচিং) সংক্রান্ত পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে ন্যস্ত করা প্রয়োজন।
মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে ঢাকার যানজট মেট্রোরেল নির্মাণ শুরুর আগের অবস্থায় রাখার জন্য ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করা হয়েছে। এই প্ল্যান বাস্তবায়নের পরও যানজট হচ্ছে। চালক ও সড়ক ব্যবহারকারী কেউই ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না।
মেট্রোরেল নির্মাণের সময় প্রদর্শিত পরিষেবা স্থানান্তর করার কাজে ঢাকা নগরবাসীকে অপ্রত্যাশিতভাবে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পরিকল্পনাধীন পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণে এ ধরনের পরিস্থিতি পরিহার করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা মহানগরীর বাস সেক্টর পুনর্গঠনের মাধ্যমে একক বাস কোম্পানি গঠন করে মহানগরীতে যাত্রীসেবা চালু করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
কারা বিভাগের অনুমোদিত ১৪১টি চিকিৎসক পদের মধ্যে মাত্র ১০ জন কর্মরত। ১৩১টি চিকিৎসক পদ শূন্য থাকায় কারাবন্দি চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিঘœ ঘটছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার কথাও রয়েছে।
ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর নিয়োগবিধি চ‚ড়ান্ত করতে না পারায় শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মারাত্মক জনবল সংকটে নিপতিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধের পরও ভ‚মি হস্তান্তরে বিলম্ব হয়। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেবাদানকারী সংস্থা কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করে সড়কের পাশে বিভিন্ন সার্ভিস লাইন স্থাপন করে। সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের সময় এসব সংস্থা অযৌক্তিক অর্থ দাবি করে। এসব সংস্থা সময়মতো এসব সার্ভিস লাইন স্থানান্তর করে না।
সড়কে নির্মাণ বা উন্নয়ন কাজ করার সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার আওতায় থাকে। এর ফলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এতে যানজটের মাধ্যমে মহাদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিশেষায়িত ইউনিট সৃজনকেও অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিআরটিএ পরিবহন সেক্টরে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছে না। ১৯৮৭ সালে ২৯১ জন লোক নিয়ে বিআরটিএ যাত্রা শুরু করে। ২০০৬ সালে জনবল ৫৭৩ জনে উন্নীত হয়। ২০০৯ সালে জনবল দাঁড়ায় ৮২৩ জনে। স্বল্প জনবলের মধ্যেও ১১৫টি পদ শূন্য। বিআরটিএর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে সড়ক সেবা প্রদানকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উচ্চ আদালতে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা থাকায় সমবায় অধিদপ্তরের ৯৪০টি এবং বিআরডিবির ১ হাজার ১৫৪টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সংস্থা দুটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভক্ত হওয়ার আগে অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) প্রণয়ন করা হয়। কোনো কোনো অপারেশনাল প্ল্যানে উভয় বিভাগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এরূপ অপারেশনাল প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজের গতিশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। কাজের গতিশীলতা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন না হওয়াকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিজেএমসিতে মৌসুমের শুরুতে পাট ক্রয় খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হলে বেশি দামে পাট কেনা হলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অফিস স্পেস সংকট এবং মহাখালীর নিপোর্ট চত্বরে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অফিস ব্যবস্থাপনার চ্যলেঞ্জও রয়েছে।