সৌদিতে নাজেহাল বাংলাদেশি শ্রমিক

‘আকামার’ (কাজের অনুমতিপত্র) মেয়াদ আরও ১০ মাস বাকি থাকলেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আকমত আলীর মতো আরও ২০০ বাংলাদেশিকে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় দেশে ফিরতে হয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
আকমত আলী বলেন, আটক হওয়ার পর সৌদির যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেখানে ফোন করা হলেও মালিক তার ব্যাপারে পুলিশকে কিছু বলেনি। ফেরত আসা গোপালগঞ্জের সম্রাট শেখ বলেন, আট মাসের আকামা ছিল তার। নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং কোনো কিছুই না দেখে দেশে পাঠিয়ে দেয়।
সৌদি ফেরত নারায়ণগঞ্জের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আকামার মেয়াদ দেখানোর পরও কফিলের (নিয়োগকর্তা) মামলা থাকায় আমাকে দেশে পাঠানো হয়। এক বছর আগে দালালের মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকায় আমি সৌদি গিয়েছিলাম। বাসাবাড়ির ড্রাইভার হিসেবে যাই আমি। যে টাকা বেতন দেওয়ার কথা ছিল তা না দেওয়ায় আমি অন্য বাসায় কাজ নিই। এতে আমার কফিল রাগ করে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের প্রতি মাসে কফিলকে ৩০০-৪০০ রিয়াল দিতে হয়। রিয়াল না দিলেই কফিল হয়রানি করেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজারের
বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। তবে একদিনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী ফেরত এসেছেন গত শুক্রবার।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ফেরত আসা কর্মীরা যেসব বর্ণনা দিচ্ছেন সেগুলো মর্মান্তিক। সাধারণত ফ্রি ভিসায় গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে অনেককে ফেরত আসতে হতো। কিন্তু এবারের বিষয়টি ভিন্ন। অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে যারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এই দায় নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ যেন গিয়ে এমন বিপদে না পড়েন সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বরাবরের মতো এবারও দেশে ফেরা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বিমানবন্দরে জরুরি খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সহায়তা প্রদান করা হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে। অক্টোবর মাসেই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় ৮০৪ জনকে ব্র্যাক সহযোগিতা করেছে।
শুক্রবার রাতে ফেরত আসা শ্রমিকদের বেশিরভাগের অভিযোগ, সৌদিতে শত শত বাংলাদেশি শ্রমিক নাজেহাল হচ্ছেন। সৌদিজুড়েই চলছে শ্রমিক ধরপাকড়। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হলে অথবা কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে আটক হচ্ছেন অনেকেই। এর মধ্যে বৈধভাবে থাকা অনেকেও নাজেহাল হচ্ছেন। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অজুহাতে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে শ্রমিকদের।
তারা জানান, ‘আকামা’ থাকা সত্তে¡ও তাদের সৌদি পুলিশ আটক করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। এ বিষয়ে সৌদিতে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তাদের সহযোগিতাও পাচ্ছেন না। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে সৌদি পুলিশ তাদের আটক করে, সে সময় নিয়োগকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যান। ফলে আকামা থাকার পরও তাদের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘদিন অবৈধভাবে থাকা কিছু বাংলাদেশিকেও আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।