জয়-লেখকের বৈঠকে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের আলটিমেটাম

ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে এবার তিনদিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। এই সময়ের মধ্যে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখলে ফের কর্মসূচিতে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনের গোলঘরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে এ হুশিয়ারি দেন তারা। এ সময় পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অন্তত ৩০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। এখনও বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হয়নি। ফলে সংগঠনে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলাভিত্তিক দায়িত্ব না দেয়ায় তৃণমূল সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বকে সংগঠন গতিশীল করার লক্ষ্যে বিতর্কিতদের বাদ দিতে তিনদিনের মধ্যে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছি। তা না হলে আলোচনার মাধ্যমে ফের আন্দোলনে যাব।
পদবঞ্চিত আরেক নেতা সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রানা হামিদ বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার দায়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। অথচ তাদের সময়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া বিতর্কিতরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। আমরা দফায় দফায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে বলেছি।
অথচ তারা নানাভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা শুরু থেকেই বর্তমান নেতৃত্বকে সব ধরনের সহযোগিতা করছি। আগামীতেও সহযোগিতা করব। তবে শিবির-ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশসহ যে বিতর্কিতরা কমিটিতে স্থান পেয়েছে তাদের নিয়ে তো কার্যক্রম চলতে পারে না।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, আমরা বিতর্কিতদের অবশ্যই রাখব না। এই বিষয়টি আগেই পরিষ্কার করেছি। কিন্তু সবাই তো জানেন আমরা কীভাবে একটি বিশেষ অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছি। ফলে অনেক কিছুই বুঝে-শুনে এগোতে হচ্ছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা সবাইকে নিয়েই কাজ করছি।
যারা পদবঞ্চিত, তাদেরও সবকিছুতে যুক্ত করছি। বিতর্কিতদের বাদ দিতে শুরু থেকেই আমরা কাজ করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারব।
এর আগে, গত ১৩ মে সম্মেলনের এক বছর গঠিত হয় ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নবগঠিত এই কমিটি থেকে সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা অর্ধশত নেতা বাদ পড়েন ও প্রত্যাশিত পদবঞ্চিত হন। ফলে সেদিনই এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে এবং বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদ প্রদানের দাবিতে বিক্ষোভ করে পদবঞ্চিতরা।
এরপর মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে কয়েক দফায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান। পদবঞ্চিতরা ১৬ মে বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মে জড়িত এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও রেওয়াজ পরিপন্থী উপায়ে পদ বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন। এ সব নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছলে ১৯ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সিনিয়র চার নেতার হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত করে পদবঞ্চিতরা।