ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


বাগদাদিকে ধরতে ‘অপারেশন কায়লা মুয়েলার’

সহচর দিয়ে বাগদাদির বাগদাদ সন্ধান পায় ট্রাম্প বাহিনী


২৯ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:১৯

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ১৪:৫৪

ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার পাওয়া গেছে। প্রতিবারই ওই সংবাদ মিথ্যে প্রমাণ করে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন বাগদাদি। কিন্তু গত শনিবার সিরিয়ার একটি গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের এলিট ফোর্সের চালানো অভিযানে বাগদাদি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কীভাবে বাগদাদিতে শনাক্ত করা হয় ও তার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়– এ নিয়ে গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বাগদাদির শীর্ষ সহযোগীদের কাছে পাওয়া তথ্যেই তার অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরাকি গোয়েন্দারা। প্রতিবেদনে দুই ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়। ইরাকি ওই কর্মকর্তারা জানান, কীভাবে এত বছর ধরে বাগদাদি ধরা না পড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, সে বিষয়ে আইএস নেতার এক শীর্ষ সহযোগী তথ্য দেওয়ার পর ২০১৮-র ফেব্রম্নয়ারিতে ইরাকি গোয়েন্দারা প্রথম একটি সূত্রের সন্ধান পান।

বাগদাদির সহযোগী ইসমায়েল আল ইথাবি গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইরাকি কর্মকর্তাদের জানান, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও স্থানীয় কয়েকটি জিহাদি গোষ্ঠীর হাত থেকে বাঁচতে বাগদাদি অনেক সময় শাকসবজি ভরা চলন্ত মিনিবাসে বসে তার কমান্ডারদের সঙ্গে কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসতেন।

ইরাকি এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘বাগাদাদির চলাফেরা ও লুকিয়ে থাকার জন্য যেসব জায়গা তিনি ব্যবহার করেন, সে ধাঁধার নিখোঁজ অংশগুলো পূরণ করতে ইথাবি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। এসব তথ্যই ইরাকের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত টিমকে ধাঁধার সমাধান পেতে সাহায্য করে। ইথাবি তার নিজের কথাসহ পাঁচজন লোকের বিস্তারিত তথ্য আমাদের জানান। তারা সবাই বাগদাদির সঙ্গে সিরিয়া ও বিভিন্ন স্থানে (যেগুলো তারা ব্যবহার করেছেন) বৈঠক করেছিলেন।’

ইসলামিক সায়েন্সে পিএইচডিধারী ইথাবিকে আইএস নেতার শীর্ষ পাঁচজন সহযোগীর একজন বলে বিবেচনা করেন ইরাকি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ইথাবি ২০০৬ সালে আল-কায়েদায় যোগ দেওয়ার পর ২০০৮ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর জেলে কাটান বলে জানিয়েছেন ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

চলতি বছরের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইরাকি গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আইএস নেতা ধরা পড়েন। ওই নেতাদের মধ্যে চার জন ইরাকি ও একজন সিরিয়ান ছিলেন।

ঘটনাসংশ্লিষ্ট এক ইরাকি কর্মকর্তা বলেন, ‘সিরিয়ার কোথায় কোথায় তারা বাগদাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন সবগুলোর তথ্য আমাদের জানান তারা। ওই এলাকাগুলোর ভেতরে আরও সূত্র মোতায়েনের জন্য সিআইএর সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। ২০১৯ এর মাঝামাঝি আমরা ইদলিবকে শনাক্ত করি যেখানে বাগদাদি তার পরিবার ও তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ অনবরত এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যাচ্ছিলেন।’

এই সময় সিরিয়ায় থাকা গুপ্তচররা ইদলিবের বাজারে চেক স্কার্ফে মাথা ঢাকা এক ইরাকিকে দেখতে পান এবং একটি ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। এই ব্যক্তিটি ইথাবি ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইরাকি কর্মকর্তারা। চররা ইথাবিকে অনুসরণ করে বাগদাদি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, তার খোঁজ পান।

এরপর স্যাটেলাইট ও ড্রোন ব্যবহার করে গত পাঁচ মাস ধরে ওই এলাকার ওপর নজরদারি চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের দুই দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি মিনিবাসে করে বাগদাদি ওই এলাকা ছেড়ে নিকটবর্তী একটি গ্রামে চলে যান।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর ইরাক থেকে আটটি হেলিকপ্টার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা কয়েকশ মাইল পাড়ি দেয় গত রবিবার ভোরে। তাদের টার্গেট ছিলেন বাগদাদি। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি এলিট ফোর্স ‘অপারেশন কায়লা মুয়েলার’ কোড নামে ওই অভিযান চালায়।

ট্রাম্প এই অভিযানকে ‘বিপজ্জনক ও রাত্রিকালীন বেপরোয়া অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল বাগদাদি তখন পালাতে শুরু করেন এবং একটি সুড়ঙ্গ পথের শেষ প্রান্তে গিয়ে সুইসাইড ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে তিন সন্তানসহ বাগদাদি মারা গেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা বাগদাদির শেষ সময়ের কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

অভিযান চালানোর সময় ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ছিলেন। হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের পাশে বসে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন এবং সেনাবাহিনীর জেনারেল ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মাইলি ও বিমানবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্কট হোয়েল।