ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


যোগ্যদের ডিঙিয়ে

এসএসসি পাস করে প্রথম শ্রেণির পদে থোয়াই মং প্রু মার্মা!


৩১ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:৫১

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ১৬:৪১

চট্টগ্রামের হালিশহরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের (সিএসডি) ব্যবস্থাপকের মতো প্রথম শ্রেণির পদে এসএসসি পাস এক ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন কর্মকর্তা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে এমন অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে থোয়াই মং প্রু মার্মাকে সিএসডির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ড়্গেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। তদবির ও টাকা দিয়ে এই পদ বাগিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে নতুন বদলি ও পদায়ন নীতিমালার কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগরের হালিশহরে অবস্থিত সিএসডি কার্যালয়ে বর্তমানে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন থোয়াই মং প্রু মার্মা। তিনি ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাসের যোগ্যতা নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরে সহ-উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি পেয়ে খাদ্য পরিদর্শক (ফুড ইন্সপেক্টর) হন। সর্বশেষ কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদ থেকে গত ১৬ অক্টোবর হালিশহরের সিএসডি কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ পান। দেড় মাসের মাথায় তিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, সিএসডি ব্যবস্থাপক/সহকারী ব্যবস্থাপক পদটি প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তার জন্য। সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে এমন জ্যেষ্ঠ অনেক কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। এ ড়্গেত্রে মোটা অংকের টাকার বিনিময় হতে পারে। এর আগে একবার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হওয়ায় তাকে পদোন্নতি দেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এবার তিনি ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে পদটি লুফে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসডির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক থোয়াই মং প্রু মার্মা বলেন, ‘আমি পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে বৈধভাবেই এই পদে এসেছি। অধিদপ্তর আমাকে এই পদে বসিয়েছে। এখানে দোষের কী আছে?’

এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘হালিশহর সিএসডি দশটি উপজেলা অফিসের গোডাইন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেটির ব্যবস্থাপক বা সহকারী ব্যবস্থাপক পদটি ছোট নয়। সেখানে দেখেশুনে পদায়ন করা হয়ে থাকে। যদি হালিশহর সিএসডিতে পদায়নের ড়্গেত্রে কোনো অবৈধ লেনদেন বা তদবির হয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বদলি ও পদায়ন নীতিমালার প্রসঙ্গ টেনে খাদ্য কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার ৪২৬ নং স্মারকে খাদ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি/পদায়ন নীতিমালা-২০১৯ জারি করা হয়। নীতিমালার ২ (গ) ধারা অনুযায়ী খাদ্য বিভাগের সিএসডিগুলোর সহকারী ব্যবস্থাপক/ব্যবস্থাপক পদে নিজ জেলায় নিয়োগ/পদায়ন/বদলি করা যাবে না। সারা দেশে খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে কৌশলগত কারণে ১০টি জেলায় ১৩টি সিএসডি এবং ৫টি জেলায় ৫টি সাইলো কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জেলায় ২টি করে মোট ৬টি সিএসডি কার্যালয় রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব সিএসডি কার্যালয়ে বিসিএস পদমর্যাদার একজন ব্যবস্থাপক ও প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদমর্যাদার দুজন সহকারী ব্যবস্থাপকের পাশাপাশি একাধিক এসআই ও এএসআই’র পদ রয়েছে। নীতিমালার ২ (গ) ধারা অনুযায়ী, মাত্র ১০টি জেলার খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিজ নিজ জেলার অন্তভুক্ত সিএসডিগুলোর নিয়োগ/পদায়ন/বদলি হবে না। যদিও খাদ্য বিভাগে এতদিন সিএসডির ড়্গেত্রে এ নিয়ম ছিল না। এখন অজানা কারণে এ ধারাটি অন্তভুক্ত হওয়াতে কয়েকটি জেলার কর্মকর্তারা নিজ নিজ জেলায় সিএসডির মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পাবেন না। এ ড়্গেত্রে বদলি নীতিমালার উল্লিখিত ধারায় সর্বজনীনতা বজায় না রেখে কয়েকটি জেলার কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেবৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, এসব ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন।