এবার নজরদারিতে অর্ধশত দুর্নীতিবাজ এমপি-মন্ত্রী

চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে নজরদারিতে রয়েছেন প্রায় অর্ধশত এমপি-মন্ত্রী। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অনুশাসনগুলো এমপিরা যথাযথভাবে মেনে চলছেন কি না এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কী পরিমাণ অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের এমপি ও সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুসহ তার পরিবারের সদস্যদের। এ রকম আরও ৪০-৪৫ জন বর্তমান ও সাবেক এমপি ও মন্ত্রী এ তালিকায় রয়েছেন। ক্যাসিনোকাণ্ড তালিকায় রয়েছেন ঢাকার কয়েকজন এমপি।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, চলমান শুদ্ধি অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া এমপি মন্ত্রীরা। অভিযুক্ত এসব এমপির তালিকা প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচিত দুবারের এক এমপি, ঠাকুরগাঁও থেকে একাধিকবার নির্বাচিত এক এমপি, আবাসন ব্যবসায়ী রাজশাহীর এক এমপি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, ঢাকার একাধিক এমপি, নরসিংদীর গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এক এমপি, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের কয়েকজন এমপি, কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি কালো তালিকায় রয়েছেন। জামালপুরের এক এমপি যিনি বিগত সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তার বিষয়েও সরকারের নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও এমপি প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছরের জানুয়ারি থেকেই এমপিদের সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমপিদের জন্য ১০টি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এগুলো হলো টেন্ডারে হস্তক্ষেপ না করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা, উন্নয়নকাজে হস্তক্ষেপ না করা, নিয়োগ বাণিজ্য না করা, থানা-পুলিশে জামিন ও মামলায় তদবির থেকে বিরত থাকা, গ্রুপ তৈরি না করা, দলীয় কোন্দল নিরসন করা, স্থানীয় প্রশাসনে রদবদলে ভ‚মিকা না রাখা, ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য না করা এবং মাদকসহ অবৈধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা।
এই নির্দেশনা অমান্যকারী এমপিরাই এখন নজরদারিতে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর কোনো কোনো এমপি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার ও সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পে হস্তক্ষেপ করছেন। প্রশাসনে রদবদলের জন্য চাপ প্রয়োগ এবং সরকারি বিভিন্ন দফতরে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেরা বাণিজ্য করে চলেছেন। এসব কারণে আমলারা তো বটেই মন্ত্রীরাও অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। এই অবস্থায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে নিয়ে আসেন কেউ কেউ। তারপরই সরকার প্রধান এমপিদের জন্য ১০টি অনুশাসন জারি করে সবাইকে এই অনুশাসনগুলো মেনে চলার নির্দেশ দেন।