ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


চাহিদা দিয়েও শিক্ষক নিয়োগে অসম্মতি

বেতন-ভাতা বন্ধ হচ্ছে ৮৩ প্রতিষ্ঠান প্রধানের


৪ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০১

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ১৮:৪৭

সুপারিশের পরও শিক্ষকদের যোগ দিতে না দেওয়ায় দেশের ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন-ভাতা স্থগিত বা বাতিল এবং পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করা হতে পারে।’ এরই ধারাবাহিকতায় এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। চিঠি দেওয়ার পর সঠিক সময়ের মধ্যে জবাব আসার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রণালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০১৮-এর আলোকে চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩১ হাজার ৬৬৫ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্র্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানপ্রধান এসব শিক্ষককে অস্বীকৃতি জানায় এবং কেউ কেউ যোগদানের শর্ত হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। এনটিআরসিএতে এমন ১৮৪টি অভিযোগ জমা পড়ে। পরে ১৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ও শিক্ষকদের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এরপর যাচাই-বাছাই করে সত্যতার প্রমাণ পাওয়ায় ৮৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বছর ১২ জুন এনটিআরসিএ থেকে জারি করা বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর ১৮.১ এর (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক এনটিআরসিএতে শিক্ষক চাহিদা দিলে ওই পদে মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে। প্যাটার্নের অতিরিক্ত চাহিদা দিলে সেই শিক্ষক কর্মচারীদের শতভাগ বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাহ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বেতন-ভাতা স্থগিত বা বাতিল করা হবে এবং পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর ভিত্তিতেই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের চাহিদা এনটিআরসিএতে পাঠায় এবং সেই চাহিদার বিপরীতে ৩১ হাজার ৬৬৫ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।

গত ১ অক্টোবর এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন ৮৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের বেতন-ভাতা স্থগিত ও ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সুপারিশ দিয়েছে। এ সুপারিশের আলোকে গত ৩০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এক চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অসম্মতি জানিয়েছেন ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বেতন-ভাতা কেন বন্ধ করা হবে না এবং কমিটির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কারণ দর্শানোর জবাবের ওপর মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

অভিযোগকারীদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী শিক্ষক অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এনটিআরসিএ নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেছি। এনটিআরসিএ আমাকে নিয়োগের সুপারিশও করেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানের কমিটি ও প্রধান শিক্ষক আমাকে নিয়োগ দিতে দিচ্ছে না। নিয়োগের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ চেয়েছেন। এরপর আমি এনটিআরসিএতে লিখিত অভিযোগ করেছি।’

জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ এসেছিল। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কমিটি নীতিমালাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

৮৩ প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা কেন শিক্ষক নিয়োগে অসম্মতি জানিয়েছেন জানতে চাইলে মাউশির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এদের মধ্যে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নতুন জনবল ও এমপিও কাঠামো না দেখে আগের নিয়মে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন এনটিআরসিএ বরাবর। অথচ সেই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই এনটিআরসিএ নিয়োগের সুপারিশ করেছে। এছাড়া কেউ কেউ চাহিদা দিয়ে নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ চেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বেতন-ভাতা স্থগিত হতে পারে। একই সঙ্গে কমিটির কার্যক্রম বাতিল করে নতুন কমিটি দেওয়ার আদেশ হতে পারে।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুককে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতেই এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। কিন্তু যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের যোগদান করতে বাধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’