সাংসদ পঙ্কজের লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা: কেউ পঙ্গু, কেউ এলাকা ছাড়া

বরিশাল-৪ নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই দলীয় সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের হাতে এ যাবত বেশি নির্যাতিত হয়েছে। কেউ পঙ্গু, কেউ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাদের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বহিরাগতদের দ্বারা শাসন করছেন হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ ও কাজিরহাট থানা। এমনটি জানালেন কাজিরহাট থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র।
সোমবার বিকালে বরিশালের শহরের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই নির্যাতিত নেতা সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের সন্ত্রাসের লোমহর্ষক বিভিন্ন কাহিনিসহ দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির দালিলিক প্রমাণসহ তুলে ধরেন।
নির্যাতিত সঞ্জয় চন্দ্র দলীয় সাংসদের নিজ হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর গত তিন বছর বরিশাল শহরে আশ্রয় নিয়ে আছেন। ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংসদ পঙ্কজ অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও আত্মীয়করণ করার প্রেক্ষাপটে দায়ের করা একটি মামলার তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কালক্ষেপণ নিয়ে মিডিয়াকে অবহিত করা।
সঞ্জয় চন্দ্রের অভিযোগ মেহেন্দিগঞ্জে ৯টি কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দলীয় সাংসদ প্রভাব বিস্তার করে ২০১৫ সালে ১৮ জন শিক্ষককে নিয়োগ পাইয়ে দেন। এর মধ্যে তার আপন ভাইয়ের স্ত্রী কল্যাণী দেবনাথ রয়েছেন। এই নিয়োগ বাণিজ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লেনদেন হয় বলে তিনি দাবি করেন। বিতর্ক এড়াতে ২০০৯ সালে তাদের নিয়োগ দেখানোর ক্ষেত্রে ভুয়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও নিয়োগ কমিটির একজনের স্বাক্ষর জাল করার প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
এ নিয়ে ঘাটাঘাটি করায় ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল সঞ্জয় চন্দ্রর ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় হাতুড়িপেটা তার দুটি পা একটি হাত অকেজো করে দেওয়া হয়। পরে তাকে মিথ্যে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফা তাকে তুলে নিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ নতুন ডাক বাংলোর ভেতর সাংসদ পঙ্কজ নিজেই পিটিয়ে অর্ধমরা করে নদীতে ফেলে দেন।
২০১৪ সালে নির্বাচিত এই সাংসদকে যেন পুনরায় দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া হয় সেই দাবিতে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে এই এলাকার নেতাকর্মীরা কনভেনশনের আয়োজন করে তাদের ওপর হামলা মামলার চিত্র তুলে ধরেছিলেন। তবুও পঙ্গজ ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান এবং সাংসদ নির্বাচিতও হন।
জনশ্রুতি রয়েছে বিদ্রোহী নেতা সঞ্জয় চন্দ্র দলীয় সাংসদের জুলুমবাজির অতিষ্ঠ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং এলাকার সার্বিক চিত্রপট তুলে ধরেছিলেন। এর আগে সঞ্জয় বরিশাল আওয়ামী লীগের বর্ধিত এক সভায় উপস্থিত হয়ে তার ওপর সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিয়ে সুবিচার চেয়েছিলেন।
তার আক্ষেপ এতেও কোনো সুফল পাননি। ১/১১-এর শাসনামলে দুর্নীতি মামলায় দÐাদেশপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি পঙ্কজ একদিকে দলীয় নেতাদের পিটিয়েছেন, অন্যদিকে চরের জমি দখল ও টেন্ডারবাজিসহ দলীয় তহবিল গঠনের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এসব কর্মযজ্ঞে নিজের স্বজনদের অগ্রভাগে রেখেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হয় মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চরে দেড় হাজার একর জমি থেকে বছরে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আলিমাবাদ ইউনিয়নের শ্রীপুরের গাগড়িয়ার চরে তার চাচাত ভাই রাম কৃষ্ণ নাথ হাজার হাজার একর জমির ভুয়া খতিয়ান খুলে ঘর তৈরি করে তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করেন।
পঙ্কজের বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে দৃশ্যমান সম্পদ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত এক প্রশ্নে বিস্ময়ক তথ্য আবিস্কৃত হয় এই বিদ্রোহী নেতার বর্ণনায়। তিনি জানিয়েছেন রাশিয়ার মস্কোতে সাংসদের বোন জামাতার মাধ্যমে সেখানে ডেভেলপার্ক ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা পথে সঞ্জয় চন্দ্র জানালেন নির্যাতিত দলীয় নেতা আবারও এক মঞ্চে উঠে ক্যাসিনো কান্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ হারানো সাংসদ পঙ্কজের বিতর্কিত কর্মকান্ড সম্পর্কে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করার প্রস্তুতি নেওয়ার খবর।
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতার উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই আয়োজনকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অভিহিত করে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।