তৃণমূলে ভোট চান না শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভাসহ
তৃণমূলের সর্বস্তরের সম্মেলন চলছে। কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের রাজনীতিও শক্তিশালী ও চাঙ্গা করতে। তাই জোরেশোরেই চলছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলন। তবে তৃণমূলের নেতা নির্বাচনে ভোট প্রক্রিয়া একপ্রকার পুরোপুরিই এড়িয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। অতীতে দেখা গেছে, কোনো জেলায় একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী থাকলে এবং প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হলে ভোট করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, এবার একাধিক প্রার্থী থাকলেও সমঝোতা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ভোটাভুটি করে তৃণমূলের নেতা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভোট প্রক্রিয়ায় না যেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তৃণমূলের সম্মেলন হলেও নেতা নির্বাচনে ‘সিলেকশন’ পদ্ধতি অনুসরণ করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, গঠনতন্ত্র পারমিট করে সিলেকশনকে। তাই আমরা সিলেকশনে নেতা নির্বাচন করছি এবার তৃণমূলে। অবশ্য ভোটেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমঝোতা ব্যর্থ হলে ভোটে নেতা নির্বাচন করা হয়।
ভোট প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন, ভোট প্রক্রিয়ায় গেলে দলীয় কোন্দল দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে রেষারেষি সৃষ্টি হয়। আর তা দলীয় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সারা দেশের সাংগঠনিক যেসব জেলা রয়েছে সেগুলোতে এবার ভোটাভুটি করে নেতা বানানো হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার ভিত্তিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করে তা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা ফিরছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংগঠনিক জেলার নেতা কে হবেন তার নামও ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের বলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ফলে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সম্মেলনে গিয়ে শেখ হাসিনা যে নামের তালিকা হাতে তুলে দিচ্ছেন তাদেরই নাম ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর দুই সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা, পৌরসভা ও থানা কমিটিতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। তবে উপজেলা, পৌরসভা ও থানা কমিটির জন্য কারও নাম প্রস্তাব করছেন না শেখ হাসিনা। সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বসে সমঝোতা করে কমিটি দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে তার। দলকে রাহুমুক্ত করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে এমপি-মন্ত্রীদের একধরনের বলয় থাকে। এ কারণে অনেক সময় অযোগ্য লোক দলের পদ-পদবি পেয়ে যান। অনুপ্রবেশকারীদের পদ পাওয়ার সুযোগও তৈরি হয় ওই বলয়ের কারণেই। স্থানীয় রাজনীতি যেহেতু তাদের অধীনে থাকে তারা মেকানিজম করে বলয়ভুক্ত নেতা বের করে নিয়ে আসেনই। ফলে যোগ্য, ত্যাগী, স্বচ্ছ ও মেধাবীরা রাজনীতি করার অধিকার ও পদ-পদবি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। বিষয়টি অনুধাবন করে শেখ হাসিনা অন্তত জেলা কমিটিতে যেন ভালো নেতা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন সেজন্য আগে থেকেই নাম প্রস্তাব করে রাখছেন। নেতা হিসেবে যাদের নাম প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে দেন তাদের সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে আগেই খোঁজখবর নিয়ে রাখেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ভোটেও তৃণমূলে নেতা নির্বাচন হয়। এবার আমরা চাইছি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের সাবজেক্ট কমিটি দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে। সেসব সাংগঠনিক জেলায় যেখানে একাধিক প্রার্থী সেখানে সাবজেক্ট কমিটি বসে সমঝোতা করার চেষ্টা করে। সেটা ব্যর্থ হলে ভোট প্রক্রিয়ায় যাই আমরা। ভোট হলো সর্বশেষ ধাপ। তিনি বলেন, ভোট পরিহার করার কারণ হলো ভোট হলে দলে বিভাজন সৃষ্টি হয়। সেই বিভাজন দূর করতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।