নামমাত্র ছাত্র-শিক্ষক ভবন দিয়েই এমপিও

২৩ অক্টোবর সরকার ঘোষিত এমপিও স্কুলের মধ্যে নাম আসে কালিয়া উপজেলার মাউলী ইউনিয়নের পঞ্চগ্রাম নিম্ন্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। বিষয়টিতে হতবাক খোদ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৩১ অক্টোবর থেকে পাশের ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে শুরু হয়েছে ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি। চাকরি ছেড়ে দেওয়া শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া শুরু করেছেন। প্রধান শিক্ষক আর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দৌঁড়ঝাপ বেড়ে গেছে। একই ইউনিয়নের ভালো বিদ্যালয় বাদ দিয়ে এমপিরও শর্তপূরণে ব্যর্থ বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
৩ নভেম্বর ও ৮ নভেম্বর সরেজমিন চান্দেরচর পঞ্চগ্রাম নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায়, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাউলী ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের পাশে টিনের ভাঙাচোরা ঘর রয়েছে। খুপড়ি ঘরের পেছনে ঘন বনজঙ্গল ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভেতরে তিনটি কক্ষের মধ্যে দুতিনটি করে বেঞ্চ রয়েছে। ঘরটিতে জানালা-দরজা নেই বললেই চলে। একেবারেই স্যাঁত সেঁতে ও নোংরা পরিবেশ। এখানে শিক্ষার্থীরাও ঠিকমত উপস্থিত হয় না। শিক্ষকদের বসার চেয়ার-টেবিলও নেই।
বিদ্যালয়ের সভাপতির নিজের জমিতে ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে নতুনভাবে মাটি দিয়ে কাদামাটির একটি লম্বা রাস্তা তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য রাস্তার অপরপ্রান্তে একটি টিনসেড নির্মাণের কাজ চলছে। ভীত তৈরি করে কয়েকজন শ্রমিক মিলে দ্রুত ইট গাঁথছেন। সাংবাদিক আসবে তাই বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিত করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির করা হয়েছে। খুলনায় বসবাসকারী প্রধান শিক্ষক মো. নাজুমল হুসাইন আজই বিদ্যালয়ে এসেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাস্তায় প্রধান শিক্ষকসহ আরও কয়েকজন, যারা নিজেদের শিক্ষক দাবি করছেন। শিক্ষক পরিচয়ধারী প্রত্যেকেই খণ্ডকালীন শিক্ষক পরিচয় দেন। এদের একজন ইমদাদুল হক বাড়ি দিঘলিয়ায়। শিক্ষকতা তো দূরের কথা তিনি বর্তমানে দিঘলিয়া বাজারে ব্যবসা করছেন। অন্যরা শিক্ষক পরিচয় দিলেও বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। প্রধান শিক্ষক জানালেন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী প্রায় দেড়শ জন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে রেগে যান প্রধান শিক্ষক।
কিছুক্ষণ বাদে ছুটে আসেন বিদ্যালয়ের সভাপতি চান্দেরচর গ্রামের মো. আসাদুজ্জামান। তিনি এসেই পকেটে রাখা জমির কাগজ দেখাতে চাইলেন। তিনি জানান, দুই একদিনের মধ্যে ঘর নির্মাণ হয়ে যাবে। বিদ্যালয়ের জন্য ৭৫ শতক জমি অনেক আগেই কেনা হয়েছে, এখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে।
প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য প্রমাণ করতে ক্লাসরুমে গিয়ে দেখা গেল ৩টি বেঞ্চে নানা বয়সের কয়েকজন শিক্ষার্থী কিছু বসে আর কিছু দাঁড়িয়ে রয়েছে। অধিকাংশের কাছে বই-খাতা নেই। এদের কয়েকজন পাশের একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র বলে স্বীকার করে।
নিজেদের ছলচাতুরি ধরা পড়ার পরে খোলাখুলি দৈন্যতার কথা স্বীকার করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান। বলেন, দীর্ঘদিন এমপিও না হওয়ায় হতাশ হয়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে। ছাত্রছাত্রী না থাকায় অন্য বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদের এ স্কুলের শিক্ষার্থী সাজানো হয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, এমপিও যখন পেয়েছি দেখবেন এখন থেকে ভালোভাবেই স্কুল চলবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজুমল হুসাইন হাজিরা খাতাপত্র নেই বলে স্বীকার করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় চালাচ্ছি। এমপিও হওয়ার জন্য কোনো তদবিরও করিনি। আল্লাহ আমাদের এমপিও মিলিয়ে দেছে, এখন ভালোভাবে স্কুলটি চলবে।
জানা গেছে, এমপিও ভুুক্তির শর্তের অন্যতম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে উপযুক্ত অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ, প্রতিষ্ঠানের নামজারি, জমিসংক্রান্ত সকল তথ্যের মূল কপি যাচাই-বাছাই কমিটিকে প্রদর্শন, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী ক্লাসরুমের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষক, ফলাফল, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শৌচাগার, জনসংখ্যা, নিকটবর্তী প্রতিষ্ঠানের ভৌগলিক দুরত্ব অন্যতম। যার কোনোটিই নেই পঞ্চগ্রাম নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম ছায়েদুর রহমান বলেন, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ীই সরকারিভাবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চগ্রাম নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে।