জি কের সব কাজ বাতিল

দরপত্র কারসাজি ও নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নামধারী নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের একক নামে থাকা ১৪ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাতিল করেছে সরকার। গতকাল সোমবার জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জি কে বিল্ডার্স’-এর কাছে চিঠি পাঠিয়ে বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে জি কে শামীমের পক্ষ থেকে কাজের সর্বশেষ অবস্থা নিরূপণ করতে প্রতিনিধি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজের মূল্যায়ন করে আর্থিক দিক ঠিক করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ) অনুযায়ী, টানা ২৮ দিন কাজ বন্ধ থাকার পর তারা আইন অনুযায়ী কাজগুলো বাতিল করেছেন। এর আগে জি কে শামীম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তার হাতে থাকা কাজগুলো বাতিলের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন গতকাল বলেন, ‘জি কে বিল্ডার্সের নামে থাকা একক কাজগুলো টানা ২৮ দিন বন্ধ থাকায় আমরা আইন অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে চিঠি দিয়েছি। আর যেসব কাজ জি কে শামীমের সঙ্গে যৌথ প্রতিষ্ঠান করছে তা এখনই বাতিল হচ্ছে না। তবে সেখানেও কাজের গতি ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর আমরা নজর রাখছি। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারার মতো কোনো আশঙ্কা দেখা দিলে সেখানেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল জি কে শামীমের সবুজবাগের ৯৬, পূর্ব বাসাবোর বাসার ঠিকানায় কাজের চুক্তি বাতিল করে চিঠি দেওয়া হয়। একাধিক প্রকল্প পরিচালক ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরে পাঠানো পত্রে বলা হয়, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেসার্স জি কে বিল্ডার্সের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী
‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’ এবং ‘মৌলিক চুক্তি’ ভঙ্গ হয়েছে। চুক্তিপত্রের সাধারণ শর্তাবলি (জিসিসি) অংশের শর্ত ৪৪.২ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করার কারণ বা সময় বাড়ানোরও কোনো আবেদনও করা হয়নি। কাজের সর্বশেষ অবস্থা অনুযায়ী জিসিসি অংশের ১৭.১, ৪২.১, ৪৩.১ শর্ত সুনির্দিষ্টভাবে ভঙ্গ হয়েছে। তাই এ চুক্তিপত্রের সকল আইনগত বৈধতা নিঃশেষ হয়েছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, পিপিআর-২০০৮-এর ৩৮(৫)-এর বিধিমতে চুক্তি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজের জন্য চুক্তিটির সকল কার্যকারিতা বাতিল করা হলো। বাতিল-উত্তর সুবিধাজনক সময়ে জিসিসি অংশের ৭১.১ অনুযায়ী ‘লিক্যুইডিটেড ড্যামেজ’ বিষয়ে পিপিআর-এর আলোকে সম্পাদিত কাজের পরিমাপ গ্রহণ ও সম্পাদিত কাজের পাওনা পরিশোধে (যদি থাকে) বিধিমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছে, মোট ৫৬টি কাজ রয়েছে জি কে শামীমের হাতে। এর মধ্যে ১৪টি কাজ তার একক প্রতিষ্ঠানের নামে আর বাকি ৪২টি কাজ রয়েছে জয়েন্টভেঞ্চার (জেভি)। চলমান এ ৫৬ কাজের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। জি কে শামীমের একক নামে থাকা চুক্তি বাতিল করা কাজগুলো হলো সচিবালয়ে ২০ তলা ভবন নির্মাণ, ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, গণপূর্ত নগর বিভাগে চেয়ারম্যানের বাড়ি নির্মাণ, নগর বিভাগের স্যুইট ও ডরমেটরি নির্মাণ, একই বিভাগে চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক নির্মাণ, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের অফিস ভবন নির্মাণ, র্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ, গণপূর্ত সম্পদ বিভাগের আওতায় ফিনিশিং ওয়ার্ক নামের একটি প্রকল্প, নগর গণপূর্তের অধীনে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ‘নিটোর’ প্রকল্প, সিলেট গণপূর্ত বিভাগে জেলা হাসপাতাল নির্মাণ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল নির্মাণ, আজিমপুর ২০ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প ও ৩২৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা সচিবালয়ে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণকাজ।