ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


ডিজিটাল সরকার চালুর উদ্যোগ


১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৪১

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০১:৪৩

সরকার ডিজিটাল গভর্নমেন্ট বা ই-গভর্ন্যান্স চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ডিজিটাল গভর্নমেন্ট আইন খসড়া প্রস্তুত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রস্তাবিত আইনের নিয়ম-কানুন না মানলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। আইন অমান্য করলে তা সরকারি কর্মচারীর অসদাচরণ হিসেবেও গণ্য করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইনটির শুধু প্রাথমিক খসড়া করা হয়েছে। এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। তারপরও এ বিষয়ে জানতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ আইনের মাধ্যমে সরকার জনপ্রশাসনে পুরোপুরি ই-গভর্ন্যান্স কার্যকর করবে। ই-গভর্ন্যান্সকেই একটি আইনি রূপ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে রূপকল্প ঘোষণা করেছেÑ তার একটি প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে ই-গভর্ন্যান্স। এর লক্ষ্য হলো মৌলিক সেবাগুলোকে জনগণের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসা। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশাসনিক কর্মকা-কে দ্রুততর করা এবং জনগণের আরও কাছাকাছি পৌঁছানো এ আইনের উদ্দেশ্য।

২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এসব মাধ্যমে

অভিযোগ করা হয় তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো একসঙ্গে উল্লেখ ছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে মাত্র।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সচিবরা বিদেশে বসেও বিভিন্ন ফাইল অনুমোদন করতে পারেন। প্রস্তাবিত আইন পাস হলে সরকারের সব কর্মচারী কর্মস্থলের বাইরে থেকেও সংশ্লিষ্ট ফাইলে কাজ করতে পারবেন। এমনকি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কনফারেন্স ও সভা করা যাবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা যাবে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগীয় মামলায় সরাসরি উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে হয়।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দপ্তরের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য উন্মুক্ত সরকারি উপাত্ত প্ল্যাটফরম তৈরি করা হবে। যেখানে সরকারি দপ্তরসমূহ নির্ধারিত মানদ- অনুসরণ করে উপাত্ত সংযোজন করতে পারবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর্মসম্পাদনের জন্য সরকার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর প্রদানের এখতিয়ার দেবে। ডিজিটাল সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ডিজিটাল স্বাক্ষর সনদ গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো ডিজিটাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগাযোগকারীর পরিচিতি তথ্য উল্লেখ থাকবে। সব সরকারি দপ্তর ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ডোমেইন হতে পত্রজারিসহ সব দাপ্তরিক যোগাযোগ করা যাবে।

খসড়া আইনে সরকারি দপ্তরসমূহ ডিজিটাল গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সেবা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সরকার যখনই কোনো তথ্য প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট পণ্য, সেবা বা অবকাঠামো তৈরি করবে তখন তা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করে করবে।

সরকারি দপ্তর ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফি, কর, জরিমানা, ক্ষতিপূরণ, সারচার্জ ও স্ট্যাম্পের অর্থ আদায় করতে পারবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, ক্ষতিপূরণ বা বৃত্তি প্রদান করা যাবে। সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, পোস্ট অফিস, অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থা একক বা সমন্বিতভাবে ডিজিটাল সেবাকেন্দ্র স্থাপন করবে। নাগরিক অসন্তুষ্টি বা অভিযোগ প্রতিকারের জন্য সমন্বিত অনলাইন অভিযোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে সরকার। সরকার সব তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি কাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। প্রযুক্তি সংক্রান্ত অন্যান্য আইন তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ করলেও ডিজিটাল গভর্নমেন্ট আইনের খসড়া করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে।