ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


মেস মালিকের কাছে জিম্মি নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা


২৫ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৩৯

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০৩:৩০

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে একমাত্র আবাসিক হলটি বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কারণে প্রকট আকার ধারণ করেছে আবাসন সংকট। আর এই সুযোগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছাত্রাবাস। এসব ছাত্রাবাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন না থাকায় এবং ক্যাম্পাস থেকে দূরে হওয়ায় ফায়দা লুটছেন মালিকরা। আদায় করছেন বাড়তি ভাড়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে আবাসনব্যবস্থা আছে ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর। এই সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মাইজদী শহরের ওই ছাত্রাবাসগুলোতে থাকছেন প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে তাদের। এসব ছাত্রাবাসে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে হল রয়েছে মাত্র ৪টি। ১টি হল নির্মাণাধীন। গত ১ সেপ্টেম্বরের সংঘর্ষের জেরে দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ছাত্রদের একমাত্র ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হল। এ ছাড়া আবদুল মালেক উকিল হলে আগে মেয়েরা থাকায় সেটি এখন সংস্কারাধীন। সংস্কারের পরে ছাত্রদের তোলা হবে। আর বাকি ৩টি হল ছাত্রীদের জন্য। যার মধ্যে ২টিতে বর্তমানে ছাত্রীরা থাকেন। অন্যটি নির্মাণাধীন।

মাইজদীর বিভিন্ন এলাকায় মেসে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী  বলেন, আবাসিক সংকটের সুযোগ নিয়ে নগরীতে গড়ে ওঠা এসব ছাত্রাবাস মালিকরা রমরমা ব্যবসা করছেন। ফলে মেস ভাড়াসহ বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে। তার ওপর অনিরাপদ ও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি তো আছেই। অচিরেই হলগুলো চালু করে আমাদের সীমাহীন এই দুর্ভোগ দূর করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ ব্যাপারে জানতে কয়েকজন মেস মালিককে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, ‘এমনিতেই কেউ ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেয় না। তাদের যে বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে, এটাই তো সৌভাগ্যের বিষয়।’

মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘হল বন্ধ থাকায় বাইরের মেস বা বাসাগুলোতে চাপ পড়ছে। হঠাৎ করে হল বন্ধের ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে চড়া দামে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাস না থাকায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাসগুলো ঝুঁকিতে চলাচল করছে।

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলের নবনিযুক্ত প্রভোস্ট ড. মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘হলটির সংস্কার প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হল মেরামতের জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর দ্রুত কাজ শেষ করে ছাত্রদের হলটি খুলে দেওয়া হবে।’

আবদুল মালেক উকিল হলের প্রভোস্ট ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘হলে সিট পেতে মোট ১ হাজার ৩২৯টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু সিট আছে মাত্র ৪৫০টি। ছাত্রদের ভাইভা নিয়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. মুমিনুল হক বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় আবদুস সালাম হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হল সংস্কার ও আবাসযোগ্য করতে অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তাই একটু সময় লাগছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে আমরা আলোচনা করছি। শিগগিরই এর সমাধান করা হবে।’

এ সময় নির্মাণাধীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রী হলের নির্মাণকাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এর সঠিক সময় জানাতে পারেননি তিনি।