ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


মহানগর আ'লীগ সম্মেলন ঘিরে আশায় পরিচ্ছন্ন নেতারা


২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১২:২৩

আপডেট:
২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১২:২৪

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী শনিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন সামনে রেখে চলছে পদপ্রত্যাশীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনে বিতর্কিতরা বাদপড়ায় আশায় রয়েছেন মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতারা।

চলতি মাসেই আওয়ামী লীগের কয়েকটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে। তাতে চলমান শুদ্ধি অভিযানের বড় প্রভাব দেখা গেছে। ক্যাসিনোসহ নানা কারণে বিতর্কিতরা নতুন কমিটির নেতৃত্ব পাননি। অনেকে সম্মেলনেই আমন্ত্রণ পাননি। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনেও শুদ্ধি অভিযানের প্রভাব থাকবে। এ দুই শাখার বর্তমান কমিটির শীর্ষ চার নেতা বাদ পড়তে পারেন। তাদের



জায়গায় অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন চার নেতা পদ পেতে যাচ্ছেন। সম্মেলন উদ্বোধন হবে বেলা ১১টায়। পরে বেলা ৩টায় কাউন্সিল অধিবেশন হবে। সেখানে দুই শাখার কমিটি ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছেন নতুনরা। বাদ পড়েছেন পুরনো ও বিতর্কিতরা। দলটির নেতারা বলছেন, দলের বিতর্কিত নেতাদের জন্য এটি একটি বড় বার্তা। মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও এর প্রতিফলন দেখা যাবে। মহানগরে যেসব নেতা পদ পেয়েও সক্রিয় ছিলেন না তারা বাদ পড়বেন। যাদের নামে কমিটি বাণিজ্য ও দখলবাজির অভিযোগ রয়েছে তারাও বাদ পড়বেন।


নেতৃত্ব নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিকে গুরুত্ব দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা ও বঞ্চনার শিকার নেতারা মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে যোগ্যতা প্রমাণে ছুটছেন তারা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা আশা করছেন আওয়ামী লীগের চলমান শুদ্ধি অভিযানের আলোকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের শীর্ষ পদে বসালে সংগঠন আরও চাঙ্গা হবে। এতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের পোড়খাওয়া নেতাকর্মীরা আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।

ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের রাজনীতির মারপ্যাঁচে দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত ছিলেন ছাত্রলীগের দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা। ওই সময় মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনকালে অনেক অবদান থাকলেও পরে তারা রাজনীতিতে নানা কারণেই উপেক্ষিত হয়ে যান। আসন্ন সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে থেকেও কাউকে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে আনা হতে পারে।



ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মহানগর আওয়ামী লীগের বিষয়ে একটি গাইডলাইন দিয়েছেন দলটির দুই সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খানকে। সে অনুযায়ী তারা সম্ভাব্য শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন।

এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, অন্যান্য ইউনিটের মতো ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেও প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে কমিটি হবে। শীর্ষ নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, বিতর্কমুক্ত রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, দলের জন্য অবদান-এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ চার পদেই নতুন মুখ আসতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উত্তরের সভাপতি এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত বাদ পড়তে পারেন বয়সের কারণে। অন্যদিকে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ বাদ পড়তে পারেন বিতর্কের কারণে। তাদের নামে টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তবে চারজনই চাচ্ছেন স্বপদে বহাল থাকতে।



সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজনের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মান্নাফি, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নারায়নগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু মেয়র সাঈদ খোকন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আখতার হোসেন, মহানগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ,অভিবক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মরহুম এম এ আজিজ ও প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণকারী পিয়ারু সরদারের নাতিন ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আজিজ তামিম, দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিন সরকার পলাশ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সহ সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন , সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ প্রমুখ। উত্তরের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি ও হাবিব হাসান। বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ হলেও আলোচনায় রয়েছেন উপপ্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আসলামুল হক এমপিও আলোচনায় রয়েছেন। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ধানম-ির এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকেও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে দেখতে চান অনেকে।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের জন্য লবিং করছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল,  ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর।