ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


তিন কাউন্সিলরের ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানে দুদক


২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৫৮

আপডেট:
২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৫৮

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা হলেন– ঢাকা উত্তর সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ঢাকা দক্ষিণের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু। দৈনিক অভিযোগ সেলের অতিরিক্ত দায়িত্বে থানা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল গতকাল রবিবার এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মহাপরিচালককে; যার কপি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।

দুদকে পাওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, সেন্টু কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের কাছ থেকে অর্থ নিতেন। ফিরোজকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব ২-এর এসআই জসিম উদ্দিন খান আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে উল্লেখ করেন, ফিরোজ অনেক আগে থেকেই ক্যাসিনো কারবার করতেন। এর থেকে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ তিনি দিতেন কাউন্সিলর সেন্টুকে। কাউন্সিলর সেন্টু দীর্ঘদিন সপরিবারে ঢাকায় বাস করেন। মাঝেমধ্যে তিনি গ্রামে যাতায়াত করতেন। তার স্বভাব-চরিত্রও সন্দেহজনক। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর এলাকায় অবৈধ দখল, মাদকের কারবার পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। সেন্টু সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। তিনি প্রায়ই সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে খেলতে যান। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সেন্টু সিঙ্গাপুরে আত্মগোপন করেন।

মিরপুরের কাউন্সিলর তিতুর বিষয়ে দুদকে পাওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, তিনি দেড়শ’ কোটি টাকা মূল্যের প্লট হাতিয়ে নেন। ২০০৯ সালে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জমিতে কাউন্সিলর তিতু ও তার ভাই লিটুর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। বর্তমান বাজারদরে প্রতি কাঠা পৌনে ৩ কোটি টাকা হিসাবে এই ৬৬ দশমিক ৬৬ কাঠা জমির মূল্য দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকা। ইমারত নির্মাণের ড়্গেত্রে তারা কোনো ধরনের অনুমোদনও নেননি। নির্মাণকাজ শেষে প্রায় ৩০০টি দোকান ভাড়াও দেওয়া হয়েছে। এসব দখলদার দোকান মালিককে উচ্ছেদ করতে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার গঠনের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশও করেছিল। আবার জমির মালিক জাগৃকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। তারপরও দখলদাররা আছেন বহাল তবিয়তে। অভিযোগ অনুযায়ী, জায়গাটি এলএ কেস নম্বর ১৩/৫৯-৬০ এর আওতায় জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণের পর জাগৃককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মোট ৬৬.৬৬ কাঠা জায়গায় ১৯৯০ সালে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ১৪টি প্লট তৈরি করা হয়। এ প্লটগুলোর মধ্যে ৮.৩২ কাঠা সুফিয়া খাতুন, ৮.৩৩ কাঠা আওলাদ হোসেন, ৮.৩৩ কাঠা সামসুদ্দিন আহমেদ, ৮.১৩ কাঠা মোছা. জরিনা খাতুন, ৭.৭৫ কাঠা হাজেরা খাতুন, ৪.১৬ কাঠা রেহেনা আক্তার, ৩.৫৪ কাঠা গোলাম হোসেন, ৩.৫৬ কাঠা হাজি নূর মোহাম্মদ, ২.০৪ কাঠা আশরাফ উদ্দিন, ২.৫০ কাঠা লাবিব উদ্দিন, ২.৫০ কাঠা আব্দুল হাই, ২.৫০ কাঠা ফজিলাতুন্নেছা, ২.৫০ কাঠা জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও ২.৫০ কাঠার প্লট রুহুল আমিন খানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্রে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা আজও দখল বুঝে পাননি। এছাড়াও আরও বহু অভিযোগ রয়েছে তিতুর বিরুদ্ধে।

‘কাউন্সিলর মঞ্জুর বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ৩১ অক্টোবর র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে আরও দুটি মামলা দেয় র‌্যাব। ওইসব মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন মঞ্জু।

দুদকে পাওয়া অভিযোগ মতে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০১১ সাল থেকে টানা আট বছর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন টিকাটুলীর একটি মার্কেটের ‘স্বঘোষিত’ সভাপতির পদ দখল করে আছেন মঞ্জু। তার নামে দুই মার্কেটের ১৭৮৮ দোকান থেকে প্রতিমাসে ৯৫০ টাকা করে আদায় করা হতো। এর বাইরে ঈদে বা পূজায় তাকে দিতে হয় বাড়তি টাকা। জেনারেটর, বেয়ারসহ অন্যান্য খরচের নামেও দিতে হয় চাঁদা। সেখানে মঞ্জুর কথাই যেন আইন। তার কথার অবাধ্য হলেই ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটের সব দোকান থেকে বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটর বিল বাবদ মঞ্জু চাঁদা নিতেন। টিকাটুলীর শ্রী শ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্টের সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। মঞ্জু গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই জমি দখল মুক্ত করতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা করে মঞ্জুর বাহিনী।