ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


আগামী সপ্তাহে অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন শুরু : তথ্যমন্ত্রী


৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৪৪

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০৪:২৯

আগামী সপ্তাহ থেকে সরকার অনলাইন নিউজপোর্টালের নিবন্ধন দেওয়া শুরু করবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি জানান, পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের অনলাইন পরিচালনার জন্যও অনুমোদন নিতে হবে।

এছাড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশে কেউ ইউটিউব চ্যানেল চালালেও তাকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ট্যাক্সের আওতায় আসতে হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।


তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যে অনলাইন আছে সেগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য দরখাস্ত আহŸান করেছিলাম। তথ্য মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৫৯৭টি দরখাস্ত জমা পড়েছে। সেগুলো তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, টিঅ্যান্ডটি মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ একটি সভা করেছিলাম। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যত দ্রæত সম্ভব অনলাইনগুলোর ব্যাপারে তদন্ত শেষ করে আমাদের কাছে জানানোর, যাতে আমরা নিবন্ধনের কাজটি শুরু করতে পারি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করে কয়েকশ’ অনলাইনের তথ্য আমাদের কাছে পাঠাবে। আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইনের নিবন্ধন দেওয়া শুরু করব।

এ প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুদিন সময় লাগবে। ৩ হাজার ৫৯৭টি অনলাইনের তদন্ত শেষ করা সহজ কাজ নয় এবং কয়েকটি সংস্থা তদন্ত করছে। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেক’টি আমরা আজকে বা কালকের মধ্যে পাব সেগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করব। যেগুলো নিবন্ধিত হবে না, সেগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


ভবিষ্যতেও অনলাইনের নিবন্ধন দিতে আবার দরখাস্ত আহŸান করা হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন যে অনলাইনগুলো আছে এখানেই তো শেষ হয়ে যেতে পারে না। পত্রিকা যেমন যেকোনো সময় যে কেউ বের করতে পারে, ভবিষ্যতে অনলাইনও বের করতে পারবে। কিন্তু ভবিষ্যতে অনলাইন পোর্টাল চালু করতে হলে সেটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, অনুমতির মাধ্যমে করতে হবে।

এখন যেমন কেউ চাইলেই একটি পত্রিকা বের করতে পারে না, তাকে ডিক্লারেশন নিতে হয়, নামের ছাড়পত্র নিতে হয়। অনলাইনের ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ভবিষ্যতে তা চালু করতে হবে। দেখা গেছে, ঘরের মধ্যে কয়েকজন বসে অনলাইন চালায়, এমন ঘটনাও ঘটছে।
টিভি চ্যানেল-পত্রিকার অনলাইনেরও অনুমোদন নিতে হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক অনলাইন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা দিচ্ছে। অনলাইন পত্রিকার নয়, কাগজের পত্রিকার অনলাইন ভার্সন করা হচ্ছে। সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।

সেগুলোও একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। কারণ যিনি যেটার লাইসেন্স পেয়েছেন সেটার বাইরে করতে পারবেন না। শুধু যে পত্রিকাগুলো অনলাইন করছে তা নয়, টেলিভিশনও অনলাইন চালু করেছে। সেটিরও অনুমতি এখনও পর্যন্ত নেই। সবকিছু একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য আমরা একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তিনি বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে অনলাইন চালু করেছে, সেগুলোরও অনুমতি নিতে হবে।


ইউটিউব চালালেও ট্যাক্স : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, বাণিজ্যিক উদ্দেশে কেউ ইউটিউব চ্যানেল চালালেও তাকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ট্যাক্সের আওতায় আসতে হবে। কেউ যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশে করে, আমরা কিন্তু ইউটিউব, ফেসবুকসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের মাধ্যম ব্যবহার করে যে ব্যবসা হচ্ছে বা বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, সেগুলোতে ট্যাক্স আরোপ করার কথা বলেছি। আমরা এনবিআরের সঙ্গেও কথা বলেছি। সুতরাং বাণিজ্যিক উদ্দেশে কেউ যদি করে সেক্ষেত্রে অবশ্যই দেশের নিয়ম-ট্যাক্সেশন আইন অনুযায়ী আইন মেনে করতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী জানান, মোবাইল কোম্পানিগুলো নানা ধরনের ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করে ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছে আবার সেখানে বিজ্ঞাপনও নিচ্ছে। এটির লাইসেন্স তাদের দেওয়া হয়নি।

তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তারা যেভাবে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে এবং বিজ্ঞাপন দিচ্ছে অর্থাৎ সেখানে ব্যবসা করছে এটির লাইসেন্স তাদের দেওয়া হয়নি। এটি বন্ধ করতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি দিয়েছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও আলোচনা করেছি। এটিও একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। এভাবে যে কেউ চাইলেই যেকোনো কিছু লাইসেন্সবিহীন করতে পারে না।

ডাবিং সিরিয়াল প্রচারে অনুমতি দিতে কমিটি : তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে যে বিদেশি সিরিয়াল ডাবিং করে প্রচার করা হচ্ছে সেগুলোর অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছি ও অনুমতির জন্য দরখাস্ত করেছে। আমরা অনেকগুলো দরখাস্ত নিষ্পত্তি করেছি। একটি ছবি মুক্তি পেতে হলে তাকে সেন্সরবোর্ড হয়েই আসতে হয়। এই সিরিয়ালগুলো একটি ছবির চেয়েও সময় অনেক বেশি। কোনোটি ৫০ পর্ব, কোনোটি ৩০ পর্ব এ রকম বহু পর্বে ও প্রতিটি পর্ব হচ্ছে এক ঘণ্টা কিংবা আধা ঘণ্টা কিংবা ৪৫ মিনিটের পর্ব। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়।

সে লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যেই একটি বাছাই কমিটি গঠন করেছি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (সম্প্রচার) নেতৃত্বে কমিটিতে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুন-উর-রশীদ, সারা যাকের, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স প্রতিনিধি, ডিরেক্টরস গিল্ডের একজন প্রতিনিধি, অভিনয়শিল্পী সংঘের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। একজন উপসচিব সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যেকোনো টেলিভিশনে কোনো বিদেশি ডাবিং করা সিরিয়াল প্রচার করতে হলে এই কমিটি দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, নতুন প্রজন্মের মনন তৈরিতে বা সমাজে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে কি নাÑ তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদন দেবে।