বিশ্বস্ত সাধারণ সম্পাদক খুঁজছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন সাধারণ সম্পাদক খুঁজছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় রাজনীতিকে আরও শক্তিশালী করে চলমান উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে তিনি একজন সময়োপযোগী রানিংমেট চান। যিনি সততা, নিষ্ঠা, আনুগত্য, সাহস ও দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন।
নেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রথাগত নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে গুণগত পরিবর্তন এনেছেন। এর ছোঁয়া লাগবে মূল দলেও। আগামী মার্চে শুরু হওয়া মুজিব বর্ষের আগেই দলে নতুন রক্তের সঞ্চালন ঘটাতে চান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নতুন রূপে সাজাতে চান আওয়ামী লীগকে। সে জন্য পুরো কমিটিতেই আসতে পারে বড় রদবদল। পুনঃবন্টন হবে একই পদে টানা এক দশক দায়িত্ব পালন করা নেতাদের দায়িত্ব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০-২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সম্মেলন ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন তুঙ্গে। বরাবরের মতো কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক, দলে ও দলের বাইরে এ নিয়েই মূল আলোচনা। প্রথম সারির নেতারাও ব্যস্ত তাদের সাংগঠনিক নৈপুণ্য দেখাতে।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলররা মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মনোভাবকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তবে এবারের সম্মেলন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এখনও দলের কোনো নেতার সঙ্গে সম্মেলনের নেতৃত্ব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেননি। বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক আলাপে তিনি সৎ ও যোগ্যদের সামনে নিয়ে আসার কথা বলেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সফরে সেখানকার নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নেতৃত্ব নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দলের নেতৃত্বে সৎ, যোগ্য এবং পরীক্ষিতদের সামনে নিয়ে আসা হবে। যারা আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে নতুন অবয়বে সাজাতে পারবে তাদের নিয়ে আসা হবে।
আওয়ামী লীগের অনেকের ধারণা ছিল, শুদ্ধি অভিযানের ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলের মধ্যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা মনে করছেন না। বরং তিনি দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের আদর্শিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ রূপরেখা হচ্ছে, বিতর্কিত ও অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, দলে যারা ত্যাগী, আদর্শিক, সৎ এবং দুঃসময়ের সঙ্গী তারা কোণঠাসা হয়ে গেছেন। যারা টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস করেন এবং বৈধ ও অবৈধ পন্থায় টাকা-পয়সা বানিয়েছেন, তাদের অনেকেই দলের নেতৃত্বের সামনে চলে এসেছেন। এই অবস্থা পাল্টে ফেলা হবে। আওয়ামী লীগে অনেক মেধাবী তরুণ রয়েছেন যারা দলে জায়গা পাচ্ছেন না, কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। রাজনীতি করতে গেলেই যে সন্ত্রাস লাগবে, টাকা-পয়সা লাগবে এই ধারণা ইতোমধ্যে পাল্টে ফেলছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই পাল্টে ফেলার অংশ হিসেবেই দলে ও সরকারে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাদের বিভিন্ন সময়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেকের মধ্যে লোভ ঢুকে গেছে, অনেকে আদর্শচ্যুত হয়ে গেছে। এই আদর্শবিচ্যুত এবং অভিযুক্তদের দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের দল গঠন করা সম্ভব নয়।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আগামী বছর মুজিব বর্ষকে। মুজিব বর্ষের আগেই আওয়ামী লীগের এই বদলে যাওয়া রূপ দেখা যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা প্রতিষ্ঠিত, পেশাজীবী এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি তাদেরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, যারা দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেন সেসব ব্যক্তিদের সামনে নিয়ে আসা হবে। আর সে জন্যই বর্তমানের এই চলমান শুদ্ধি অভিযান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মূলধারায় থেকে যারা আদর্শের প্রতি অবিচল ও অনুগত, সততার পরীক্ষায় যিনি উত্তীর্ণ, অনিয়ম-দুর্নীতি যাদের স্পর্শ করেনি এমন কাউকেই দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোতে যেমন সৎ ও আদর্শবান নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে, মূল দলেও এর ছোঁয়া লাগবে।আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব কে পাবেন তা একান্তই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্ধারণ করবেন।