চট্টগ্রামে রাজনীতির হালচাল
উত্তর আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি কে হচ্ছেন

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম মহানগর ও দড়্গিণ জেলার সম্মেলন না হলেও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। প্রায় সাত বছর পর আগামী শনিবার (৭ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কে হচ্ছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি– তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সভাপতি পদে নেতাকর্মীদের মধ্যে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
তারা হলেন– বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে থাকা রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার নগরের কাজীর দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাতটি উপজেলা, ৯টি পৌরসভার ৩৬৮ কাউন্সিলরের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সভাপতি ও এমএ সালাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হলে ওই পদে কমিটির তিন নম্বর সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল আলম চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি নুরুল আলম মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ২ নম্বর সহ-সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তিনি কমিটির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন।
বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তার আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে করিম চৌধুyরীর সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় নেতারা দুজনের মধ্যে সমন্বয় করেই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় সভাপতি পদটি সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে ফজলে করিম চৌধুরী সভাপতি হলে এমএ সালামই টানা (২৭ বছর ধরে) পঞ্চমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। আর এমএ সালাম সভাপতি হলে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সমীকরণ সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অনেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
সভাপতি পদের সমীকরণের ওপর নির্ভর করে সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে তারা হলেন– মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (সাবেক) শেখ আতাউর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, নির্বাহী সদস্য ও মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন। এছাড়া বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ইউনুচ গণি চৌধুরী, জসীম উদ্দিন, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, এটিএম পেয়ারুল ইসলামসহ কয়েকজনের নামও শোনা যাচ্ছে।
আসন্ন সম্মেলন ও প্রার্থিতা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৭ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এখানে কোনো কোন্দল নেই। প্রধানমন্ত্রী দলের সব জেলার খবর রাখেন। প্রশাসনিক সব সংস্থার রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। প্রধানমন্ত্রী যা ভালো মনে করেন সেটাই হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কাউন্সিলররা যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। ’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে উত্তর জেলার সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটির সম্মেলন শেষ হয়েছে। এখন জেলা কমিটির সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।