ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


মেয়ে হত্যার মামলা না নিয়ে উল্টো বাবাকে ফাঁসালেন ওসি


৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৮

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০৮:০৫

পাবনার ফরিদপুর থানার ওসি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ‘শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে এক গৃহবধূ নিহতের’ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত না করে উল্টো মামলার বাদী বাবাকেই ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আন্দোলনে নেমেছে। এর অংশ হিসেবে আশা খাতুন নামে ওই গৃহবধূ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং ওসি আবুল কাশেমের অপসারণ দাবিতে গতকাল বুধবার উপজেলার গোপালনগর গ্রামের কয়েকশ বাসিন্দা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আশার স্বজনদের ভাষ্য, চার বছর আগে পার্শ্ববর্তী

গোলকাটা গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছফর আলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় গোপালনগর গ্রামের আশা খাতুনের। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়িতে থাকা অবস্থায় ননদের স্বামী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার জা আঙ্গুরি ও জাহানারা খাতুনের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলে সে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে পরিকল্পিতভাবে আশা খাতুনকে মারপিটের পর জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয় তারা। খবর পেয়ে বাবার বাড়ির লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আশা।

আশার বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, প্রথমে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আশা আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। কিন্তু তার তিন বছরের কন্যাসন্তান আরিকাকে নানাবাড়ি আনা হলে সে জানায়, তার মাকে বড় মা জাহানারা ও আঙ্গুরি পেটানোর পর গলাটিপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে। শেষে মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে উল্টো আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে জামিনে বের হয়ে আশা ‘হত্যার’ ঘটনায় গত ২৮ নভেম্বর জাহিদুল ইসলাম বাবু বাদী হয়ে পাবনার আমলি আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যামামলা দায়ের করেন। পরে বিচারক মো. মুরাদ জাহান মামলাটি গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য ফরিদপুর থানায় পাঠালেও পুলিশ মামলাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আশার স্বজনদের। এছাড়া আশা ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গ্রামবাসী থানার ওসিকে বারবার অনুরোধ করলেও তিনি কোনো তোয়াক্কা করেননি।

গতকাল গোপালনগর গ্রামের বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আজহার আলী সরকার, উপজেলা শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব আলী সরকার, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি শাহাদত হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল আলম খান বক্তব্য দেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর বলেন, ‘আশা হত্যার ঘটনায় ওসি আবুল কাশেমের ভূমিকা ন্যক্কারজনক। তিনি কেবল আশা হত্যাকা- ধামাচাপাই নয়, টাকার বিনিময়ে তিনি যেকোনো অপকর্ম করতেই দ্বিধা করেন না। আমরা এই দুর্নীতিবাজ ওসির অপসারণ চাই।’

আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার পর থানা মামলা নেয়নি। উল্টো ডাকাতির মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। কোর্টে মামলা করায় এখন নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মামলা তুলে নিতেও ওসি সাহেব চাপ দিচ্ছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুর থানার ওসি আবুল কাশেম  বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের উৎকোচ গ্রহণ করিনি। আর আশা নামে কোনো নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি। আমার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের এই অভিযোগ পুরোপুরি ষড়যন্ত্র।’

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনা তদন্তে ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।’