১১ হাজার রাজাকারের নাম মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে

মহান বিজয় দিবসের আগের দিন আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে একাত্তরের রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করতে চায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে এই তালিকা প্রকাশ করা হবে। সূত্র জানায়, প্রথম দিন প্রকাশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বেতনভোগী ৩৯৯ জন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ১০ হাজারের বেশি নাম নিয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের হাতে এসেছে প্রায় ১১ হাজার রাজাকারের নাম। এগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হচ্ছে প্রথম তালিকা।
১০ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থানা, মহকুমা, জেলা প্রশাসন থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনকারী রাজাকারদের তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটিকে রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরুর কথা জানায়। এজন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধকালে ২০ (ওই সময় জেলা ছিল ২০টি) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ভাতার তালিকা কাক্সিক্ষতভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে পর্যায়ক্রমে রাজাকারের তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিজয় দিবসের আগের দিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে রাজাকারের নাম প্রকাশ করার কথা রয়েছে। সেসঙ্গে ওইদিন মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকাও প্রকাশ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠনে যেসব বাঙালি পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছে তাদের নাম ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতনভুক্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে এমন রাজাকারের তালিকা চাওয়া হয় জেলা প্রশাসকদের কাছে। এরই মধ্যে ছয় জেলা থেকে ৩৯৯ জনের নাম পাঠানো হয়। বাকি জেলা থেকেও নাম আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে চাঁদপুরে নয়, মেহেরপুরে ১৬৯, শরীয়তপুরে ৪৪, বাগেরহাটে এক ও নড়াইল থেকে ৫০ জন রাজাকারের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ি, মাগুরা, শেরপুর, গাইবান্ধা ও যশোরের শার্শা উপজেলায় কোনো বেতনভোগী রাজাকার ছিল না বলে জানানো হয়। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর দালাল আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল এমন ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তির একটি তালিকাও সরকারের হাতে আছে। এর বাইরে ১৯৭১ সালে খুলনায় আনসার হেডকোয়ার্টার্সে পাওয়া তালিকায় ৩০ হাজারের বেশি রাজাকারের তথ্য মিলে ছিল। পাকিস্তান সরকারের বেতনভোগী রাজাকারদের ওই তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এটিও প্রকাশ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ওই সময় ভাতা নিয়েছে বা যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয় এবং ভূমিকাসহ রেকর্ড বা তালিকা সেই ১৯৭১ সালেই জেলাসহ স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই রেকর্ড সংগ্রহ করে রাজাকারদের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যারা বেতন নেয়নি; কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং নিজেরা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তাদের নামও প্রকাশ করা হবে। সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের এপ্রিলে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে এটা প্রকাশ করে। ওই সময় গ্রামগঞ্জে মেম্বারদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ওলামাসহ পাকিস্তানের সমর্থক এমন অনেক দল ওই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, রাজাকারদের তালিকা হাতে আসা শুরু হয়েছে। কয়েকটি জেলার তালিকা এসেছে, তবে তা পূর্ণাঙ্গ নয়। ১০ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে সেখানে রাজাকারের তালিকার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, সব জেলার রাজাকারের তালিকা এখনও এসে পৌঁছেনি। ইতোমধ্যে ১০ জেলার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১০ হাজারের বেশি নামের তালিকা তার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথম দিন পাকিস্তান সরকারের বেতনভুক্ত রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে তালিকা প্রকাশ চলতে থাকবে।