ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’এর কাণ্ডে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা


২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:২৯

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ১৭:৩৬

মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও অঙ্গীকার পরিপন্থী গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা। ২২ ডিসেম্বর, রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানান তারা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাগণ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্টীর অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং জুলুম-নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তিলাভের আশায় এবং দেশের মানুষকে মুক্ত করার আশায় অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম নতুন কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আগ্রাসনের কবলে পুনরায় দেশকে ঠেলে দেয়ার জন্য নয়, বা মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে শোষণ-লুণ্ঠন ও দেশের জনগণের প্রতি নিপীড়ন-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নয়। কিন্তু আমরা বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যাদের বিতর্কিত ও গণবিরোধীকর্মকাণ্ডের কারণে দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।

অতিসম্প্রতি ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নাম ব্যবহার করে কতিপয় সুবিধাবাদী, গণবিরোধী ও দেশদ্রোহী যুবক ভারতের মোদী সরকারের ঘৃণ্য, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মবিদ্বেষী আইন এনআরসিএবং সিএএ-র পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, ভারতের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সেই গণধিকৃত আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তার সাথে সংহতি জানাতে যখন এদেশের ছাত্রসমাজ সভা-সমাবেশ করেছে, তারা সেই সমাবেশের উপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। তারা লাঠিসোঠা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। এটা আরো উদ্বেগের বিষয় যে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এগুলোর ছবি-ভিডিওসহ প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়া সত্ত্বেও, এমনকি আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা থানা বা প্রশাসনকে বিষয়গুলো জানানোর পরও তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা দেখিনি।

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিভিন্ন দেশে চলমান ঔপনিবেশিক বর্ণবাদী ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই-সংগ্রামে সংহতি জানাতে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবেই (আর্টিকেল ২৫-এর গ) অঙ্গীকারাবদ্ধ। তথাকথিত ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ বা মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট নাম আগে-পিছে বসিয়ে যারা সেই মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তারা যে দল বা মতেরই হোক, তারা দেশদ্রোহী। আমরা তাদের অবিলম্বে চিহ্নিতকরে বিচারের দাবী জানাচ্ছি।

একটা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র নির্মাণের যে অঙ্গীকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও আমরা তার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থেকে সরবো না।

মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও সেক্টর পরিচয়: ১. নঈম জাহাঙ্গীর ২. মিজানুর রহমান খান -বীর প্রতীক ৩. ফারুক্-ই-আজম -বীর প্রতীক, ৪. আলতাফ হোসেন ( সেক্টর-৩ ) ৫. সাদেক হোসেন ( সেক্টর -২) ৬. শেখ রফিকুর ইসলাম বাবলু ৭. অনিল বরণ রায় ( নৌ- কমান্ড ) ৮. মনোয়ারূল ইসলাম ( সেক্টর-৬ ) ৯. আব্দুল কাইয়ুম খান ১০. বদরুল আমিন সহ মোট ১৬ জন।