ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


জাল স্ট্যাম্পে সয়লাব বাজার


২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৩

আপডেট:
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০২

সারা দেশে বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘবদ্ধ একাধিক সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে প্রেস ব্যবসার আড়ালে কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প বাজারজাত করেছে। তাদের সঙ্গে অসাধু উকিল, ভেন্ডার ও দলিল লেখকরা জড়িত। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চক্রটি রাজধানীর বাসাবাড়িতে বসে তিন ধাপে জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছে। এরপর নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। নিখুঁতভাবে তৈরি করায় বিক্রেতারাও আসল মনে করে বাজারজাত করছেন।

এমনই জাল স্ট্যাম্প তৈরির সঙ্গে যুক্ত একাধিক সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রোবারি প্রিভেনশন টিম। তারা সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যকে আটকও করেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পূর্ব মানিকনগরের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ টাকার জাল নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পসহ সৌরভ হোসেন ওরফে সুমন (৩৫) ও ছাবিরুল ইসলামকে (৫৮) আটক করে ডিবি। এরপর ১০ অক্টোবর গে-ারিয়ার দীননাথ সেন রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল স্ট্যাম্প, নকল জমির পর্চা ও মিউটেশনের (নামজারি) কাগজসহ আকাশ হাওলাদার ওরফে উল্লাশকে (৩৯) আটক করে। সেখান থেকে কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প ও স্ট্যাম্প তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

পরে গে-ারিয়া থানায় আকাশের নামে মামলা হয়। মামলার বাদী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রোবারি প্রিভেনশন টিমের এসআই আশিক বাহার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ বেশ কয়েক বছর ধরে প্রেস ব্যবসার আড়ালে জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছেন বলে জানান। অনেকের নাম বলেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিবি জানায়, চক্রটি তিন ধাপে জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে। প্রথমে তারা নিজস্ব প্রেসে স্ট্যাম্প প্রিন্ট করে। এরপর নম্বর বসায়। সবশেষ সেলাই মেশিনের সহায়তায় বিশেষ পদ্ধতিতে ডটগুলো দেয়। এরপর আসল স্ট্যাম্পের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারে ছাড়ে। অনেক সময় ১০০টির বান্ডিলে ৫০টিই জাল থাকে। ডিবির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতার কারণেই সারা দেশে বিপুলসংখ্যক জাল স্ট্যাম্প ছড়িয়ে পড়েছে। লাইসেন্সধারী ছাড়াও অনেকে স্ট্যাম্প বিক্রি করছেন। ফলে বিক্রির পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হিসাব দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) রোবারি প্রিভেনশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোলাইমান মিয়া জানান, সংঘবদ্ধ চক্রটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি জাল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিপুল অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। তদন্তে অনেক উকিল, ভেন্ডার ও দলিল লেখকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলেও পরে জামিন নিয়ে একই কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও নজরদারির সঙ্গে জাল টাকা শনাক্তের মতো প্রযুক্তি পাওয়া গেলে জাল স্ট্যাম্প ঠেকানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।