ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আলোচনায়

স্বচ্ছ ইমেজের কারণে হিরু-তাপসের প্রতিই আস্থা নেতাকর্মীদের


২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৫৪

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ০১:২৬

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ইমেজের দুই শীর্ষ নেতা একজন অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, অন্যজন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে খুশির আমেজ দেখা গেছে। দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন পুনরায় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম হওয়ায় স্বচ্ছ ইমেজের সাহসী নেতা হিরু - তাপসের ওপরই দলীয় নেতাকর্মীদের আস্থা রয়েছে রয়েছে বলে একাধিক নেতা জানান। এ ছাড়া গুঞ্জন রয়েছে ওপরের কোনো সবুজ সংকেত না পেলে শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন ফরম তুলতেন না।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, শেখ পরিবারের সন্তান তাপস অত্যন্ত ভদ্র ও স্বচ্ছ ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার বিকল্প কেউ আছেন বলে মনে করেন না অনেকেই। স্বচ্ছ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তার জনপ্রিয়তাও শীর্ষে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ট্রামকার্ড হতে পারেন তিনি।

এদিকে, ১/১১-এর নেত্রী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা নজীবউল্লাহ হিরুকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে সব থেকে বেশি। স্বচ্ছ রাজনৈতিক দর্শন আর ক্লিন ইমেজের কারণে হিরুই হতে পারেন আগামীতে আওয়ামী লীগের দক্ষিণ সিটির কাণ্ডারি।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ও লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান বর্তমান আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজীবউল্লাহ হিরু ইতোপূর্বে বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।


নেতাকর্মীদের ধারণা, ক্লিন ইমেজ, অতীতের সাফল্য ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এবার যোগ্য প্রার্থী হয়ে ওঠতে পারেন অ্যাডভোকেট কাজী নজীবউল্লাহ হিরু।

অন্যদিকে , ব্যরিষ্টার ফজলে নূর তাপস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মাত্র চার বছরের শিশু আজকের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি।
১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা এই আইনজীবী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব এবং জাতীয় সংসদে আইনপ্রণেতা হিসেবেও ভূমিকা রাখছেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে বার এট ল’ ডিগ্রি লাভ করে বাংলাদেশে আইন পেশায় প্রবেশ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার তাপস এবং সবগুলো মামলায় বিজয় লাভ করেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নামে দুটি সংগঠনে দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত থাকার পরে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে এক হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনের নাম ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ এবং শেখ তাপস এর সদস্য সচিব। তাপস ২০০৮ সালে ঢাকা-১০ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ব্যারিস্টার তাপস মনে করেন, তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা রাজনীতি করেছেন। তিনিও রাজনীতির বাইরে নন। তিনি কোনো কূট রাজনীতি বোঝেন না। কূটরাজনীতি করতেও চান না। দেশ ও মানুষের উন্নয়নের জন্য কোনো কাজই তিনি ভয় পান না। তিনি সাধারণ মানুষের মাঝেই থাকতে চান। মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নিয়েই রাজনীতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। মানুষের ভালোবাসাকে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মেনে নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান সিটির মানুষের কল্যাণে, দলের কল্যাণে।

শুধু তরুণরা নয়, ব্যারিস্টার তাপসের মাঝেই নগর পিতার নেতৃত্ব খুঁজে পাচ্ছেন প্রবীণ নেতারাও। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, তাপসের মাঝেই দেখা যায় শেখ ফজলুল হক মণির প্রতিচ্ছবি। তরুণ এ নেতার প্রশংসার পঞ্চমুখ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও।

শেখ তাপসের বাবা শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম প্রধান গেরিলা বাহিনী মুজিব বাহিনী তার নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গঠিত ও পরিচালিত হয়। তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক বাংলার বাণী পত্রিকা দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের গুলিতে বাবা শেখ ফজলুল হক মণিসহ অন্তঃসত্ত্বা মা আরজু মণিকে হারান অবুঝ দুই শিশু শেখ ফজলে শামস পরশ (৬) ও শেখ ফজলে নূর তাপস (৪)।

এক সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমের কাছে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ছোট চাচা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন আইন বিষয়ে পড়ার জন্য। আমার ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার, সায়েন্স খুব ভালো লাগত কিন্তু চাচা আমাকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। পরবর্তী সময়ে আমি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আইন বিষয়ে পড়ালেখা করলে এবং আইন পেশায় এলে হয়তো আমার সুযোগ আসতে পারে বাবার হত্যার বিচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার। সেই সুযোগ আমি পেয়েছি।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যেও ফেলেছেন আওয়ামী লীগ আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস। দুবার তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। পুরানা পল্টনের বাংলার বাণী অফিসে তার ওপর সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগেই ওই হামলার পরিকল্পনা করা হয়। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এরপর হাজারীবাগের পার্কের মধ্যে দ্বিতীয়বার হামলার শিকার হন তিনি।