আতিকের পথ পরিষ্কার দক্ষিণের জল ঘোলা

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত। তবে উল্টো চিত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। ঢাকা উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামের দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।
তবে দক্ষিণের পরিস্থিতি এখনো ঘোলাটে। কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন চাইলেও দল কাকে বেছে নেবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখানো মেলেনি। আজ শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
৩০ জানুয়ারি দুই সিটিতে হবে ভোটগ্রহণ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ২০ জন। এর মধ্যে ডিএসসিসিতে প্রার্থী ৮ জন। তারা হলেনÑ বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব এমএ রশিদ, আশরাফ হোসেন সিদ্দিকী ও আবুল হাসনাত।
সূত্র জানায়, ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন এবার মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর দুজন সদস্য জানান, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই ডিএসসিসিতে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী চাচ্ছেন। গতকাল দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যারা বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য বিতর্কিত হয়েছেন, এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নেত্রীরও (শেখ হাসিনা) ইচ্ছা ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া।
সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই নানা কারণে বিতর্কিত সাঈদ খোকনের বিরোধিতা করছেন। তাদের পছন্দ শেখ ফজলে নূর তাপস ও নজিবুল্লাহ হিরু। তবে ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি হিরুকে সবশেষ কাউন্সিলে দলের আইন সম্পাদক করা হয়েছে। সে হিসেবে ব্যারিস্টার তাপসকে মনোনয়ন ফরম তুলতে বলা হয়। গতকাল তার পক্ষে বিশাল শোডাউন দিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় ফরম তোলা শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচন করতে আগ্রহী। দলের উচ্চপর্যায়ে তিনি কথাও বলেছেন। এ বিষয়ে জানতে ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানায়, কোনো কারণে তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে নজিবুল্লাহ হিরুকে বেছে নেওয়া হতে পারে। তিনি গতকাল নিজেই দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন। নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, দলগতভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে আমি তাকে সাধুবাদ জানাব। আপা (শেখ হাসিনা) যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় উপহার দিতে পারব।
এদিকে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সাঈদ খোকন। বুধবার তিনি গণভবন থেকে বেরিয়ে নিকটজনদের মিষ্টিও খাইয়েছেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম কেনার পর কেঁদে ফেলেন তিনি। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি ‘কঠিন সময়ে’ ঢাকাবাসীর দোয়াও চান। এর পর রাতে তিনি ফের গণভবনে যান। রাত ৯টার পর তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে কাজ শুরু করতে বলেছেন। শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার তাপস ফরম তোলার পর অনেকে মনে করেছিলেন তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন।
তবে বৃহস্পতিবার সাঈদ খোকন ওই কথা বলার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। দক্ষিণে আসলে কী ঘটছে তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়।
গতকাল শুক্রবারও ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খোকন।
প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া আছে। সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় চূড়ান্ত হবে মনোনয়ন পাব কিনা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর এক সদস্য জানান, স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভার আগে নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) কাউকে ইঙ্গিত দেন না। তবে প্রার্থীদের কাজ করতে বলবেন সেটাই স্বাভাবিক। মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা জানা যাবে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, কে প্রার্থী হচ্ছেন আজ সন্ধ্যায় দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
উত্তরে মনোনয়ন জমা ১২ জনের
উত্তর সিটিতে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ১২ জন। তারা হলেনÑ বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের শহীদুল্লা ওসমানী, সামাজিক সংগঠন ‘একটি পরিকল্পিত নগরী’র চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন নান্নু, ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ইয়াদ আলী ফকির, শহীদ পরিবারের সন্তান জামান ভূঁঁইয়া, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, জেরিন সুলতানা কান্তা, ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক, খায়রুল মজিদ, রেহেনা ফরহাদ আইভি ও ইদ্রিস আলী মোল্লা।