ঢাকা শনিবার, ৫ই জুলাই ২০২৫, ২১শে আষাঢ় ১৪৩২


"পরিবারতান্ত্রিক" রাজনীতির পথে হুইপ আতিক


প্রকাশিত:
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩২


শেরপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতি করার অভিযোগ ওঠেছে।
জানা যায়, শেরপুরে কে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করবে! আর কে করবে না তা ও নির্ধারন করেন তিনি।

তিনি যাকে পছন্দ করেন তিনি রাজনীতি করতে পারবেন, অন্যদিকে, তিনি পছন্দ করেনা তিনি শেরপুর ১ আসনে রাজনীতি করতে পারবেনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দলীয় প্রোগামে তার দুই মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য চেয়ার রাখা বাধ্যতামূলক । অথচ বড় মেয়ে পরিবার পরিকল্পনায় চাকরি করে, মেয়ের জামাই ডাক্তার, ছোট মেয়ে স্কুলে পড়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সিনিয়ার নেতাদের দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

 আরো জানা যায়,  শুধু তাই না, শেরপুরে কে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করবে, আর কে করবে না তা ও নির্ধারন করেন তিনি।

নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক, দলীয় এক নেতা বলেন,     আওয়ামীলীগটা শেখ হাসিনার কাছ থেকে এক প্রকার ৯৯ বছরের জন্য লীজ নিয়ে রেখেছেন, তার জীবদ্দশায় তিনি মালিক, তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার।

জেলা আওয়ামীলীগের কোন কর্মসূচীতে তার পরিবারের জন্য কমপক্ষে চারটি চেয়ার সংরক্ষিত।

একটা বড় মেয়ের জন্য যিনি সরকারী কর্মকর্তা, আরেকটা বড় মেয়ের স্বামীর জন্য, আরেকটা ছোট মেয়ের জন্য।

নাবালিকা মেয়েরা চেয়ারে বসে থাকে, আর জেলা আওয়ামীলীগের প্রবীন ও ত্যাগী নেতারা পেছনে দাড়িয়ে থাকে।

এছাড়াও এদিকে হুইপ আতিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে,   

শেরপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিকের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ জমি থাকার একটি অভিযোগ এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। সম্প্রতি দুদকে পেশ করা ওই অভিযোগ থেকে যা জানা গেছে, শুধু জমি নয়, বাড়ি-গাড়িসহ নানা সম্পদের মালিক এমপি আতিক। যখন যেখানে পেরেছেন, তিনি জমি কিনেছেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, শেরপুরের এই এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে তদবির করিয়ে দুদক থেকে ক্লিন সার্টিফিকেটও নিয়েছিলেন তিনি। তবে ক্লিন সার্টিফিকেট নেওয়া মানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আর কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান হবে না- তা নয়। দুদক আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে সারাজীবনের জন্য দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির সনদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তির অভিযোগ অনুসন্ধানে আমলযোগ্য তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলে অব্যাহতিপত্র দেওয়া হয়। পরে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ পেশ করা হলে সেটা অনুসন্ধান করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর এমপি আতিকের বেপরোয়া দুর্নীতি উল্লেখ করে একটি অভিযোগ কমিশনে পেশ করা হয়েছে। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের অবৈধ সম্পদ ও মেগা দুর্নীতি অনুসন্ধান টিমের অধীনে আতিকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আতিক ক্যাসিনোকাণ্ডে সরাসরি জড়িত না থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত কারও কারও সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

দুদকে পেশ করা অভিযোগে আতিকের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। এতে জমি, পাকা বাড়িসহ নানা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযোগগুলো সরেজমিন অনুসন্ধান করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় কেনা জমি : শেরপুর সদর মৌজায় দুই দাগে ৩৫ দশমিক ১৬ ও ২৪ শতাংশ; বারঘরিয়া মৌজায় ছয় দাগে ৩৫, ১০ দশমিক ৭৫, ১৩ দশমিক ৫০, ৩০, ১৩১ দশমিক ৭৫ ও ১০ শতাংশ; কবিরপুর আন্ধারিয়া মৌজায় দুই দাগে ২০ ও ১৫ শতাংশ; তারাকান্দি মৌজায় পাঁচ দাগে এক একর আধা শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫০, আট, পাঁচ ও ১৩ শতাংশ; চকরামপুর মৌজায় দুই দাগে চার শতাংশ ও সাড়ে সাত শতাংশ। এ ছাড়া শেরপুরের তিনআনী বাজারে তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। শেরপুর সদর উপজেলার দুরুঙ্গি বিলের ৬০ একর জমি গ্রাস করেছেন তিনি।

পাকা বাড়ি : শেরপুর সদরের মাধবপুর এলাকায় ২৪ শতাংশের একটি পুকুর কিনে তা ভরাট করে সাততলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন আতিউর রহমান। এর প্রতিটি ফ্লোর ১২ হাজার বর্গফুটের। বাড়িটির আনুমানিক মূল্য বিশ কোটি টাকা। এর পাশেই তার আরেকটি তিনতলা ভবন রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।

ঢাকায় সম্পদ : ঢাকার লালমাটিয়ায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। নিকুঞ্জ ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের প্লট।

দুর্নীতির যেসব অভিযোগ : ব্রহ্মপুত্র সেতুসংলগ্ন গরুর হাট ও কাঁচাবাজার থেকে খাস কালেকশনের নামে প্রতি বছর সরকারি রাজস্ব খাতের ৬০ লাখ টাকা নিয়ে নেন এমপি আতিক। জেলা খাদ্যগুদাম থেকে সরকারি চাল ক্রয় ও এসএমও নিয়োগের মাধ্যমে বছরে সমপরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দী উপজেলার খাদ্যগুদামে খাদ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপির নাম ভাঙিয়ে তার দুই ভাগ্নে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন।

শেরপুর সদরের তারাকান্দি বাজারের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে নিচু জমি ক্রয় এবং তা ভরাট করে সমাজসেবা অফিসের কাছে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিক্রির প্রস্তাব করেছেন এমপি আতিক। জেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, যুব উন্নয়ন অফিস, মৎস্য ভবন, পিটিআই অফিস, প্রস্তাবিত বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিস ভবনের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট জমির মালিকদের সঙ্গে নামমাত্র মূল্যে নিজের নামে বায়না করে পরে চড়া মূল্যে সরকারের কাছে বিক্রি করেন তিনি।

পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিজ নির্বাচনী এলাকার অনেকের কাছ থেকে জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। শেরপুর সদর উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময় টিআর, কাবিখার বরাদ্দ যথাযথ ব্যবহার না করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির ক্ষেত্রে সুপারিশ করে সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শেরপুর জেলার ৫২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ : ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল দুর্নীতির অভিযোগে হুইপ আতিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দুদক উপপরিচালক কেএম মিছবাহ উদ্দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সে সময় তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর, কাবিখা ও কাবিটার বরাদ্দ আত্মসাৎ, স্কুল-কলেজ এমপিও করিয়ে ঘুষ নেওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এর মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল।
এমপি আতিকের বক্তব্য : দুদকে পেশ করা অভিযোগের বিষয়ে এমপি আতিউর রহমান আতিক বলেন, অভিযোগ কে দিয়েছে। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সব মিথ্যা ও ভুয়া। আল্লাহর রহমতে আমি সত্যের পথে চলি। অভিযোগে নামে-বেনামে দলিলসহ জমি উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ভুয়া। দুদক তদন্ত করে দেখুক, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বৈধ সম্পদের বাইরে আমার নামে এক টাকার অবৈধ সম্পদ নেই।