সাতক্ষীরার আলোচিত সেই সফি’র বিরুদ্ধে এবার এলাকাবাসীর গণঅভিযোগ
সাতক্ষীরার আলোচিত সেই সফি’র বিরুদ্ধে এবার এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে গণ অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়, দুদক, জেলা প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্র জানা গেছে, সফিউর রহমান সফি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিদ্যুত সংযোগের কথা বলে প্রচুর অর্থ আদায় করেছে।
অভিযোগকারী এলাকাবাসী জানায়, বিগত ২০০৩-২০০৪ সালে মানবপাচার করে শফি ও তার সহযোগীরা অর্থ আদায় করে বেশ কয়েকজনকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা হলেন, পাবনা জেলার মোঃ সুলতনের ছেলে আজিম ওরফে জুয়েল, মোঃ কলিমুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মোঃ ইলিয়াস, মোঃ আরিফ হোসেনের ছেলে মোঃ ফিরোজ, রাঙ্গামাটি জেলার মোঃ আসলাম হোসেনের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার সত্যনগর গ্রামের মোস্তফা চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেনের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় পনেরো লক্ষ টাকা ও পাসপোর্ট আত্মসাৎ করে। এঘটনায় আদালত শফিকে এক বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন।
এছাড়াও শফি ঢাকা, নীলফামারী ও সাতক্ষীরা জেলার ১০ থেকে ১৫ জনের নিকট থেকে প্রতারনার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, তার বাড়ির সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস হওয়ায় সে নির্বাহী প্রকৌশলীদেরকে জিম্মি করে রাখতে নানা পন্থা অবলম্বন করে। অফিসাররা যদি তার কথা না শোনে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নামে বেনামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন আবেদন করে। নিজের কোন লাইসেন্স না থাকলেও তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীদের অন্যের নামে কাজ দিতে বাধ্য করেন। তার কথায় কাজ না হলে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। এর আগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল খায়েরের কাছ থেকেও সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে সে। পরে তিনি অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে লাগাতার বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিনের নিকট হতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থ আদায় করেছে। পওর-১ ডিবিশন থেকে ৩ লক্ষ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়েছে সফি। গত ১৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ২ লাখ ও ১ লাখ করে দুটি স্লিপে মোট তিন লক্ষ টাকা ৩ লাখ টাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় মেসার্স শফি এন্টারপ্রাইজ নামের একাউন্টে জমা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিএনপি অফিসের নাম করে বাপাউবো এর শাখা কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর থেকে মোট অংকের চাঁদা নিয়েছে।
এলাকাবাসী আরো জানায়, বর্তমানে তার বাড়ি সাতক্ষীরা শহরে হলেও তার আদি বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সে প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় গরুর খাটাল, মাদক, অস্ত্র, শাড়ি কাপড় ও স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পরে। সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের তালিকাভ‚ক্ত চোরাচালানি ও হুন্ডি ব্যবসায়ী বলেও জানা গেছে। তদন্ত করলে তার অপরাধের রাম রাজত্ব খুজে পাওয়া যাবে বলে দাবি করেন এলাকাবাসী। এছাড়াও সে সরকারী কাজের বিরুদ্ধে কিংবা দরপত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্টে রিট করে কমর্কর্তা ও ঠিকাদারদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর খাল পুন:খনন কাজের বিরুদ্ধে ২০২১-২০২২ সালে একটি রিট করে কাজটি অন্যের নামে নিয়ে বিশেষ কায়দায় অর্থ আদায় করেছে।
সম্প্রতি সময়ে মজুমদার মানিকতলা খাল নিয়ে রিট করেছেন। এবিষয়ে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে। এছাড়া তাকে কাজ না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে কাজ করতে দিবে না বলেও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। একারনে সে রিট করেছে যাতে নির্বাচিত ঠিকাদার কর্তৃক কাজটি করতে দেরী হয়। তার সাথে না মিটিয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু না করতে পারে। তার এধরনের অনৈতিক রিটের কারনে সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা একটি বড় আকার ধারন করেছে। সফিউর রহমান শফি এলাকায় ফটকা শফি নামে পরিচিত। তার সাথে এলাকাবাসীর নিত্যদিন ঝামেলা লেগে থাকে।
স্থানীয়রা জানায়, গত ৫ আগস্টের পরে সে নতুন করে একটি বাহিনী সৃষ্টি করেছে। যার মাধ্যমে সে শহরে প্রভাব বিস্তারসহ নিরীহ মানুষদেরকে জিম্মি করে চলেছে। এছাড়া বিগত ২০১৮ সালে এবি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার তৎকালিন ম্যানেজার খেলাপি ঋন আদায় ও সংশ্লিষ্ট সম্পদ ব্যাংকের অনুকুলে নেওয়ার জন্য আদালতে সফিউর রহমান সফির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান।
ইটাগাছা এলাকার শিমুল হাসান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসারদের জিম্মি করতে আওয়ামী পন্থী ঠিকাদার বিএম রাজ্জাককে ব্যবহার করে কতিথ ভ‚মিহীনদের ভাড়া করে মানববন্ধন করাতো। অবশ্য পট পরিবর্তনের পরে রাজ্জাক পালিয়েছে। এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে সফি। তাকে আইনের আওতায় আনলে বড় চাঁদাবাজ চক্রের সন্ধান মিলবে।
ইটাগাছা এলাকার রেজাউল ইসলাম জানান, সফি একজন ঋণখেলাপী। সে কিভাবে অন্যের লাইসেন্সে কাজ করে। তাকে যারা এবিষয়ে সহযোগীতা করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তিনি।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ১৫ বছর নিজেকে আওয়ামী সরকারের লোক, পৌর আ’লীগ নেতা ও পতিত সরকারের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে দু’টি বিভাগে (পওর-১ ও ২) নিয়ন্ত্রণ নিতে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখতো। ঠিকাদারি কাজের চেয়ে তার আগ্রহ বেশি ছিলো চাঁদাবাজিতে। ইচ্ছামত চাঁদা দাবি করতো, না দিলেই হয়রানি। ফোঁন ধরিয়ে দেওয়া হতো কথিত সেই দুই কর্মকর্তাকে। নতুন কাজ টেন্ডার হলে তাকে একটা কাজ দেওয়াই লাগবে লাইসেন্স না থাকার পরেও এমন ভাবেও মানসিক নির্যাতন করতো অফিসারদের। সে সময়ে শফির চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসলেও বর্তমানে কর্মকর্তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রূপ ধারণ করেছেন বহু অপকর্মের হোতা সফিউর রহমান সফি। ভোল পাল্টে এলাকায় একটি চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলেছেন।
ইটাগাছা এলাকার বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম জানান, সফি’র যন্ত্রণায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এমন কোন খারাপ কাজ নেই যে সে করে না। বর্তমানে নির্দিষ্ট কোন পেশা না থাকলেও তিনি পুরটায় চলে চাঁদাবাজির টাকায়। সঠিক তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসী সফি’র শাস্থি দাবী জানান।
এসব বিষয়ে সফিউর রহমান সফি জানান, তিনি কোন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।