ঢাকা শনিবার, ৩রা মে ২০২৫, ২১শে বৈশাখ ১৪৩২


চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশন নির্বাচন

২১ পদেই ‌‘অটোপাস’ বিএনপি-জামায়াত


১২ এপ্রিল ২০২৫ ১২:১৭

আপডেট:
৩ মে ২০২৫ ২১:৩১

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে—ভোট ছাড়াই ২১টি পদে জয়ী হতে যাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিল ও যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, প্রতিটি পদের বিপরীতে মনোনয়ন জমা পড়েছে মাত্র একজন করে। ফলে শনিবার (১২ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সবাইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন ঘিরে উঠেছে নানা অভিযোগ। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া আওয়ামী লীগ বা এলডিপি সমর্থিত কোনো আইনজীবীকেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমন দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। মনোনয়ন ফরম বিতরণের দিন ব্যাপক হট্টগোল হয় এবং লিখিত অভিযোগ দিয়েও সাড়া মেলেনি বলে জানা গেছে।

ফলাফল অনুযায়ী, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪টি পদ পেয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এবং ৭টি পদ গেছে জামায়াতপন্থিদের দখলে।

সভাপতি পদে আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুসসহ সব পদেই একক প্রার্থী। একইভাবে সম্পাদকীয় ও সদস্য পদেও কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।

আওয়ামী লীগপন্থি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ অভিযোগ করেন, “সমিতির ৯৮% সদস্য ভোট দিতে চাইলেও, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অবমূল্যায়ন করে ভোট ছাড়াই জয়ী হতে চেয়েছে এক পক্ষ। আমাদের মনোনয়ন নিতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।”

এলডিপি-সমর্থিত প্রার্থী শাহাদাত হোসেন, যিনি বর্তমানে পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্বে আছেন, বলেন, “আমি নিজে ফরম নিতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ি। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। তারা বলেছে, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্বাচনে সুযোগ দেওয়া হবে না।’ এটা কোনোভাবেই গণতন্ত্র নয়।”

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আগেই উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী কমিটির পাঁচ কর্মকর্তা একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় অ্যাডহক কমিটি, যারা নতুন তফসিল ঘোষণা করে ১৬ এপ্রিল ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজনই পড়ল না।

মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমেদ বলেন, “প্রত্যেক পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবই বৈধ পাওয়া গেছে। তাই তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।”

আইনজীবীদের মতে, এমন একতরফা নির্বাচন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এই প্রথম। সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, "আমরা ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেও কখনো প্রতিপক্ষ কে নিরবাচন থেকে বাদ দেইনি, এবার তারা চক্ষুলজ্জাও রাখেনি।"

এই নির্বাচন সামনে রেখে সমিতির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির যেভাবে দলীয় বিভাজন গভীর হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক আইনজীবী। প্রশ্ন উঠছে—আইনের পেশায় গণতন্ত্র যদি সংকুচিত হয়, তবে বৃহত্তর সমাজে তা কতটা প্রভাব ফেলবে?