ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


অবশেষে হোমনায় নবজাতক সেই শিশুটি পেতে যাচ্ছে পিতৃপরিচয়, থানায় মামলা


৫ মে ২০২৫ ০০:১৯

আপডেট:
৫ মে ২০২৫ ০৪:০৫

অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনা ও ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার শ্রীমদ্দি ( কুটি পাড়ায়) অবিবাহিত যুবক-যুবতীর অবৈধ মেলামেশায় জন্ম নেওয়া সেই শিশুটি পিতৃপরিচয় পেতে যাচ্ছে।

এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. তারিখে ভিকটিমের মা নাজমা বেগম ১০ জনের নাম উল্লেখ করে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। হোমনা থানার মামলা নং-১০, তারিখ: ৩০-০৪-২০২৫ খ্রি.। ধারা: ৭/৯(১)/৩০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০,( সংশোধিত-০৩) এবং পেনাল কোড-৩৮৬/৫০৬।

মামলার এজাহারে বাদিনী উল্লেখ করেন, ১ নং সাক্ষী ভিকটিম আমার সহজ সরল কন্যা। পক্ষান্তরে, বিবাদীগণ আমার একই পাড়ার দুষ্কৃতকারী, লম্পট ও খারাপ প্রকৃতির লোক। ১নং বিবাদী আমার একই পাড়ার লোক হওয়ায় আমার অনুপস্থিতিতে আমার সহজ সরল মেয়েকে প্রেমের প্রলোভন দিয়া ফুঁসলাইতে থাকে। আমার মেয়ে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি আমাকে বলে। আমি ১নং বিবাদীর বাড়িতে গিয়া তার বাবা ৩নং বিবাদীর নিকট বিচার দেই। তার বাবা বিচার না করিয়া উল্টো আমাকে হুমকি ধমকি দেয়। অন্যদিকে ১নং বিবাদী বিভিন্ন সময়ে আমার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিতেই থাকে।গত ০১/০৮/ ২০২৪ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১ ঘটিকায় আমিসহ আমার পরবারের লোকজন আমার মেয়েকে বাড়িতে রাখিয়া কৃষি কাজ করার জন্য বাড়ির বাহিরে যাই।গত ০১/০৮/২০২৪ ইং তারিখ অনুমান ২.৩০ ঘটিকায় আমার মেয়ে হোমনা থানাধীন শ্রীমদ্দি পশ্চিম পাড়া কুটিবাড়ি গ্রামে আমার বসতবাড়ির পশ্চিম ভিটির দোচালা টিনের বসত ঘরে থাকাবস্থায় ১ নং বিবাদী মো. আশেক উক্ত ঘরে প্রবেশ করিয়া আমার মেয়েকে ফুঁসলাইয়া প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তখন আমার মেয়ে বিবাদীকে চলিয়া যাইতে বলিলে ১ নং বিবাদী মো. আশেক আমার মেয়েকে জোরপূর্বক আমার ডান পাশের রুমের চৌকির উপর শোয়াইয়া তাহার পরিহিত কাপড় খুলিয়া ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করিয়া ১নং বিবাদী উক্ত বিষয়ে কাহাকেও কোনো কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া চলিয়া যায়। আমার মেয়ে ভয়ে কাউকে কিছু বলে নাই। উক্ত ঘটনার অনুমান আট মাস পর আমার মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করিয়া আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে এক পর্যায়ে সে ঘটনার বিস্তারিত আমাকে অবগত করে এবং ১নং বিবাদী কর্তৃক ধর্ষণের ফলে সে আট মাসের অন্ত:সত্ত্বা বলিয়া জানায়। ঘটনা জানাজানি হইলে ২ ও ৩নং বিবাদী ৫ মাস পূর্বে ১নং বিবাদীকে গোপনে সৌদি পাঠাইয়া দেয়। উক্ত বিষয় নিয়া এলাকায় গুঞ্জন হইলে গত ১৩/০৪/২০২৫ ইং তারিখে ২ ও ৩নং বিবদী আমার মেয়েকে কুমিল্লা নোটারী কোর্টের মাধ্যমে ১নং বিবাদীর সহিত বিবাহ দিবে বলিয়া ঢাকা নিয়া গিয়া জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে আমাদের স্বাক্ষর নেয়। গত ১৮/০৪/২০২৫ ইং তারিখে ঢাকার রায়েরবাগ একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভিকটিমের একটি ছেলে বাচ্চা জন্ম হয়। বাচ্চা জন্ম হওয়ার ৩ দিন পর গত ২১/০৪/২০২৫ ইং তারিখ ১ থেকে ১০ নং পর্যন্ত বিবাদীগণ ঢাকার কদমতলী থানাধীন রায়েরবাগ মেরাজনগর বি-ব্লক মোজাম্মেলের বাড়িতে আমার ভাড়াটিয়া বসতঘরে যায়। উক্ত বাসায় গিয়া প্রথমে বাচ্চা দেখিতে আসিয়াছে বলিয়া ৮ নং বিবাদী বাচ্চাটিকে কোলে নেয়। তাহার পর ২ থেকে ১০ নং বিবাদীগণ পরষ্পর যোগসাজশে ২১/০৪/ ২০২৫ ইং তারিখ দুপুর অনুমান ২ ঘটিকায় আমার উক্ত ঘর হইতে আমার মেয়ের বাচ্চাটিকে জোরপূর্বক অপহরণ করিয়া নিয়া যায়। আমি বাচ্চাটিকে আমার নিকট দিতে বলিলে বিবাদীগণ আমাদেরকে হুমকি ধমকি দিয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া বলে যে, আমরা যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহা হইলে আমাদেরকে প্রাণে মারিয়া ফেলিবে। বিবাদীগণ শ্রীমদ্দির বাড়িতে আমার ছেলেদেরকে মারিয়া লাশ নদীতে ফেলিয়া দিবে। আমাদের কান্নাকাটির আওয়াজ পাইয়া ৩নং সাক্ষীসহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসিলে বিবাদীগণ দ্রুত ঘটনাস্থল হইতে চলিয়া যায়। সকল বিবাদীগণ পরিকল্পিতভাবে ১নং বিবাদীর অপরাধকে ঢাকার জন্য ও কোনো চিহ্ন না রাখার জন্য শিশু বাচ্চাটিকে অপহরণ করিয়া অজ্ঞাত স্থানে নিয়া যায়। বিবাদীগণ আমাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি দিয়া বেড়াইতেছে।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত যুবক একই এলাকার মরম আলীর ছেলে আশেক(২১)। এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে স্থানীয় মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উক্ত ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আরও কিছু ব্যক্তির নাম রহস্যজনকভাবে বাদিনীর এজাহারে উল্লেখ করা হয় নি। তারা মামলা হওয়ার পর বাদিনীর ছেলে কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে জানান কামাল।

এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানার বার দিনের মাথায় ১৫ এপ্রিল,২০২৫ খ্রি. মঙ্গলবার দুপুরে ভিকটিমের বাড়িতে যায় হোমনা থানা পুলিশ। ভিকটিমের বাবা আব্দুর রহিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হোমনা থানার এস আই ইহসানকে জানান, 'এলাকার লোকজন বিষয়টি আপস-মীমাংসা করে দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ করব না।'

এ ঘটনায় গত ১৬ এপ্রিল২০২৫ খ্রি. এবং ১৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. দৈনিক ক্রাইম পেট্রোল ২৪.কম পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. তারিখে ভিকটিমের মা নাজমা বেগম থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. নাজমুল হুদা বলেন, 'ভিকটিমের মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। মামলার তদন্ত চলমান। অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেফতার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।'