নেছারাবাদে জমি সংক্রান্ত জেরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের বালিহারী গ্রামে (৩ নং ওয়ার্ড) জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মাঝে তুমুল ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে গত ২রা জুলাই ২০২৫ বেলা আনুমানিক ১ টার সময়।
এ বিষয়ে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার ভুক্তভোগী মোসাঃ বিলকিস বেগম বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর গত ৩রা জুলাই একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আবেদনে অভিযোগের বিষয়- জায়গা জমির বিরোধের নিষ্পত্তি ও প্রতিপক্ষের হামলা, মারধর ও হুমকি প্রসঙ্গে।
আবেদনে অভিযুক্ত/ প্রতিপক্ষরা হলেন- ১/ মোঃ নান্না মিয়া, পিতা মৃত ওসমান গনি। ২/ মোসাঃ লাইজু রহমান, স্বামী মোঃ মিজানুর রহমান। ৩/ মোসাঃ ইয়াসমিন, স্বামী মোঃ নান্না মিয়া। ৪/ মোসাঃ আলো, স্বামী মৃত আব্দুল করিম। ৫/ মোসাঃ মনোয়ারা বেগম, স্বামী মৃত শাহজাহান মিয়া। সর্ব সাং সুটিয়াকাঠি, বালিহারী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর।
অভিযোগকারী মোসাঃ বিলকিস বেগম শীর্ষ খবরকে জানান, আমি এই এলাকার বার বার নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা আসনের একজন জনপ্রতিনিধি (মহিলা মেম্বার)। আমার স্বামী মৃত কাঞ্চন মিয়া ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যার সুবাদে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একটি পাঁকা হাউজ বরাদ্দ পাই এবং আমার নিজ জায়গায় ঐ হাউজটি স্থাপন করি। কিন্তু হাউজটি স্থাপন করার কিছু দিন পর থেকে আমার দেবর মোঃ নান্না মিয়া জোরজবরদস্তি পূর্বক হাউজটি তার নিজের দাবি করে এবং আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি দেয় ও ২০ হাজার টাকা দাবি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২রা জুলাই ২০২৫ নান্না মিয়ার অযৌক্তিক দাবীর বিরুদ্ধে আমি এবং আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে প্রতিবাদ করায় নান্না মিয়া ও তার ভাগ্নে বউ লাইজু রহমান, নান্না মিয়ার স্ত্রী ইয়াসমিন সহ আলো, মনোয়ারা বেগম দলবদ্ধ হয়ে আমার এবং আমার মেয়ে রিমি আক্তারের উপর অতর্কিত হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয় এবং তখন তাদের প্রত্যেকের হাতে দেশীয় অস্ত্র দাও, কাঁচি, লাঠি সোটা নিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মারার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। তখন তাদের আক্রমনাত্মক বিষয়টি আমার মেয়ের ব্যবহৃত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা হয় এবং ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার মেয়ে রিমি আক্তার পোস্ট দেয়। এতে নান্না মিয়া সহ লাইজু রহমান আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার মামলা হামলার ভীতি প্রদর্শন করে।
বিলকিস বেগম আরো বলেন, এমতাবস্থায় আমি আমার সন্তানদের নিয়ে অনেক চিন্তিত এবং আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন ও সমস্যা সমাধানে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি এবং দোষীদের বিচার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে নান্না মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি কারন তিনি আগেই একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি। যার কারনে তিনি থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।
২ নং অভিযুক্ত মোসাঃ লাইজু রহমান বলেন, আমাকে বিলকিস বেগম ও তার মেয়ে রিমি আক্তার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় আমি শুধু প্রতিবাদ করেছি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে শারীরিক হেনস্তা সহ আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে। তাদের অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
রিমি আক্তারের করা ঝগড়ার ভিডিও ফেইসবুক (টিকটকে) পোস্ট করার ব্যপারে তিনি আইসিটি মামলা/ মানহানির মামলা সহ আইনি প্রকৃয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
ঘটনা বা অভিযোগের বিষয়ে নেছারাবাদ থানার এসআই (তদন্ত) জহির উদ্দিন শীর্ষ খবরকে বলেন, ঘটনার অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক সুরাহার প্রকৃয়া চলছে। তবে জমি সংক্রান্ত ব্যপার নিষ্পত্তি তাদের দুপক্ষের সমন্বয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তে করতে হবে। আর হামলা, মারামারি, হুমকি ধমকির ব্যপারে আইনি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে প্রধান অভিযুক্ত জেল হাজতে থাকার কারনে আপাতত দুপক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং বিচার প্রকৃয়া স্থগিত রাখা হয়। যেহেতু থানায় দুপক্ষের কোনো মামলা হয়নি। তবে দুপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি প্রকৃয়ায় যতোটুকু সম্ভব থানা থেকে সুরাহার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।