সাঁওতালদের ওপর আবারও হামলার অভিযোগ সেই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নে আবারও সাঁওতালদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে।
গত ১৫ আগস্ট এ হামলার ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে গতকাল রোববার গভীর রাতে গোবিন্দগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হামলায় আহত শ্যামবালা হেমব্রম (৪৫)। গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম অভিযোগের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত রফিকুল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এর আগে গত ৩ জানুয়ারি সাঁওতাল নারী ফিলিমোনা হাসদাকে (৫৫) মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ফিলিমোনা বিরাট আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা।
ওই ঘটনায় মামলার পর পুলিশ রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে এবং উপজেলা বিএনপির সদস্যপদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। মামলায় এখন জামিনে আছেন রফিকুল।
অভিযোগকারী শ্যামবালা হেমব্রম জানান, গত ১৫ আগস্ট সাঁওতালরা তাদের একটি জমিতে ধান লাগাতে গেলে লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করেন রফিকুল চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা।
হামলায় আহত শ্যামবালা, তার নাতি জয়ন্ত হাসদা (১৯) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে শ্যামবালার ছেলে বিশ্বনাথ সরেন (২৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শ্যামবালা বলেন, 'আমার বাবা হোপনা হেমব্রম ও তার বড় ভাই নদো হেমব্রমের ৩ একরের বেশি জমির দলিল জাল করে ভোগদখল করে আসছেন রফিকুল চেয়ারম্যানের বাবা হেকিম মন্ডল ও তার ছেলেরা। এ বিষয়ে আদালতে মামলা হলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া দলিলের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপর থেকে ওই জমিতে আমরা ধান চাষের চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ বছর ধান চাষ করতে গেলে আমাদের সেচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ১৫ আগস্ট বিকেলে আমরা ওই জমিতে ধান রোপণ করতে গেলে রফিকুল চেয়ারম্যান, তার ভাই শফিকুল ও মেজবাউল ইসলাম লাঠিসোঁটাসহ দলবল নিয়ে এসে আমাদের ধান চাষে বাধা দেয় ও মারধর করে। তারা আমার শাড়ি-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।
অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে রফিকুল চেয়ারম্যানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
তবে রফিকুলের ছোট ভাই মেজবাউল ইসলাম বলেন, 'এই জমি আমার বাবা হাকিম মন্ডল ৩৫ বছর আগে হোপনা হেমব্রমের কাছ থেকে নিয়ে নেন। সেই থেকে আমরা চাষাবাদ করে আসছি। জমির মালিকানার সব বৈধ কাগজ আমাদের আছে। কোর্টে আমরা সেগুলো সাবমিট করেছি। গত ১৫ আগস্ট সাঁওতালরা আমাদের জমিতে ধান রোপণ করতে এলে খবর পেয়ে আমরা তিন ভাই গিয়ে তাদের বাধা দিই। তারা আমাদের কথা না শোনায় এক পর্যায়ে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় আমার মেজো ভাই শফিকুল ইসলাম মাথায় আঘাত পান। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।'
জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ বাগদা-ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, 'রাজাবিরাট আদিবাসী গ্রামের সাঁওতালদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিরা। সেই জমির কিছুই এখনো উদ্ধার হয়নি।'
যোগাযোগ করা হলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, 'হামলার ঘটনায় সাঁওতালরা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। আমি হাতে পেয়েছি গতরাত ২টা ৩০ মিনিটে। আমি বাইরে আছি, থানায় ফিরে মামলাটি নথিভুক্ত করব।'