ঢাকা বুধবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৫, ১লা কার্তিক ১৪৩২


চকরিয়া বদরখালীতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানববন্ধন অনুষ্টিত


প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৪৮

চকরিয়া বদরখালীতে আইন শৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার কারণে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের জোর দাবিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানববন্ধন অনুষ্টিত। ১৪ অক্টোবর ২০২৫ইং, রোজ: মঙ্গলবার, সকাল ১০ঘটিকা, স্থান: বদরখালী কলেজ গেইট, চৌরাস্তার মোড়ে বদরখালী ডিগ্রি কলেজ এর সম্মানিত অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার, পরিবেশ ও সংবাদকর্মী আলাউদ্দিন আলো এর সঞ্চালনায় প্রথমে পবিত্র আল কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন বদরখালী এম এস ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ছাত্র মো: রায়হান।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত বক্তারা বলেন করোনার সময় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চল বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম বন্ধ করে জেলা পুলিশ। বন্ধের পাঁচ বছর পরও পুলিশ ফাঁড়িটি চালু হয়নি। এতে এলাকায় খুনখারাবিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তুলেছেন। ফাঁড়িটির আওতাভুক্ত তিনটি ইউনিয়নে গত ৫ বছরে ৩০টি হত্যাকাণ্ড ঘটে তৎমধ্যে বদরখালীতেই ২৫টি ঘটে, বক্তারা বলেন ব্রিটিশ আমলে ভূমিহীন ২৬২টি পরিবারকে নিয়ে যাত্রা করা সমিতি বর্তমানে 'বদরখালী সমবায় কৃষি উপনিবেশ সমিতি' নামে পরিচিত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সমবায়ী প্রতিষ্ঠান। বদরখালী ফেরিঘাট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার সংযোগস্থল। দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে যাওয়া-আসার মূল স্থল ও নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বদরখালী। সব মিলিয়ে বদরখালী চকরিয়ার বড় অর্থনৈতিক এলাকা। এসব বিবেচনায় ১৯৯৪ সালে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির কয়েকটি কক্ষ নিয়ে অস্থায়ী বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম শুরু হয়।

২০১৪-১৫ সালে সমিতি স্থায়ী কার্যালয়ের আধুনিক ভবন নির্মাণকাজ শুরু হলে ফাঁড়ির কার্যক্রম বদরখালী বাজারের অদূরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের পাশে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু করোনার সময় ২০২১ সালের শুরুতে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম বন্ধ কার্যালয়টিতে তালা লাগিয়ে দেয় জেলা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন নিয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলত। গত এক বছরে এই তিন ইউনিয়নে ছয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং ৫ বছরের কিছু সময়ে ৩০টির অধিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে, একেরপর এক হত্যাকান্ডে মানুষ আতংকিত।

মানবাধিকার কর্মী আলো বলেন আমাদের তথ্য অনুসন্ধানে গত ২৭সেপ্টেম্বর বদরখালী ফুলতলা খাসপাড়া গ্রামে বাড়ির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধের জেরে আশ্রিত বাসিন্দার হাতে খুন হন হারুনুর রশীদ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। এর আগে ২ আগস্ট গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে সোহায়েত হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হন। বদরখালী ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামের ষ্টেশনে। ওই দিন মাতামুহুরী নদী থেকে পরিচয়বিহীন এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ছাড়া ৪ অক্টোবর রাতে বদরখালীর ফুলতলা ষ্টেশন, ২৫ সেপ্টেম্বর বদরখালী সেতু, ৯ অক্টোবর সিএনজি ষ্টেশন ছিনতাই চেষ্টা, বদরখালী ফুলতলা ষ্টেশনের পাশ্ববর্তী ছনুয়াপাড়ায় পারিবারিক সীমানা বিরোধ বাদী-বিবাদী কোপা কোপি, ৩ অক্টোবর সাংবাদিক উপর হামলা, ১৩ অক্টোবর বদরখালী ৬নং ওয়ার্ডে মহুরীজোরা পাড়া এলাকায় বিয়ের প্রলোভনে কিশোরী ধর্ষণ, একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতেছে।

বক্তব্য রাখেন বদরখালী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মো: পারভেজ মোশারফ বলেন, আমরা বদরখালীতে শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই, তিনি আরও বলেন আমার এই জন্মভূমি বদরখালী এখানেই থাকি আমি, এখানেই আমার বসবাস, আমাদের সবার কর্তব্য এই বদরখালীর’কে রক্ষা করা। অপরাধের স্বর্গরাজ্য কেন এই বদরখালী, এই অঞ্চলের কোন অভিভাবক নাই, কে দিবে তার জবাব। মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ফরিদ উদ্দীন বলেন আমরা আর কত প্রাণ হারালে বদরখালীতে পুলিশ ফাঁড়ি পাব, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি এগুলো খেয়ে নিরাপদে বসবাস করা আমাদের অধিকার, কিন্তু পুলিশ না থাকায় আমরা সব সময় আতংকে বসবাস করি। বদরখালী এম এস ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাঈদ আনোয়ার তারেক বলেন আমাদের শুধু পুলিশ কে দোষ দিয়ে লাভ নাই, এটি স্থানীয় সচেতন নাগরিকের দায়িত্বও বটে আপনারা পাড়া মহল্লায় একটা একটা আইন শৃঙ্খলা উন্নয়ন প্রতিরোধ করুন এবং প্রশাসন কে সহযোগিতা দিন, দেখবেন আইন শৃঙ্খলা অবশ্যই উন্নতি হবে, তবে এত বড় একটা জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি অবশ্যই প্রয়োজন আছে মনে করি, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে বদরখালী ডিগ্রি কলেজ এর সম্মানিত অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলেন আমরা দিন দিন নীতিনৈতিকতা বিহীন কাজ করছি, এত বড় একটা সমবায় এলাকায় আমরা সামান্য কিছু অপরাধীর কাছে জিম্মি এটার মূল কারন একটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং আমাদের নিজেদের সংশোধন করা, আমরা শুধু বক্তব্য দিয়ে শেষ করি কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করি না, আমাদের সংবাদকর্মী প্রিয় আলো ভাই যে ভাবে মানুষের বিপদ আপদে ছুঁটে যায় এদের মত কিছু ব্যক্তি দায়িত্ব নেওয়ার দরকার আছে না হয় এটি আরও চরম পর্যায়ে চলে যাবে, আমরা চুড়ান্ত ভাবে এটি আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি এটা আদায় না হলে দীর্ঘ সময় যত আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয় সেটা অব্যাহত রাখতে হবে।

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন বদরখালী ডিগ্রি কলেজ প্রতিনিধি সুমাইয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির বদরখালী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো: রাসেল বদরখালী কলোনীজেশন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবু নাঈম লিটন, বদরশাহ স্কুলের প্রতিনিধি মাস্টার মাহামুদুল করিম, ইকরা একাডেমি প্রতিনিধি মাস্টার জসিম উদ্দিন, বদরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকিয়া সোলতানা প্রমুখ।