ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলা, নারী-শিশুসহ ২০০ জনের বেশি নিহত


১৮ মার্চ ২০২৫ ১২:২০

আপডেট:
২ মে ২০২৫ ২০:৩৬

মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনি মেয়ের মৃতদেহ পরিবহন করছেন একজন চিকিৎসক

গাজায় ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ভোরে উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। খবর আল জাজিরা, বিবিসির।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু।

গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এটি গাজায় সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। গাজা যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

গাজায় আল জাজিরা আরবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের আবাসান শহরের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো তীব্র গোলাগুলির সঙ্গে গোলাবর্ষণ করছে।

চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহতে তিনটি বাড়ি, গাজা শহরের একটি ভবন এবং খান ইউনিস ও রাফাহতে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিকের ঘটনাগুলো বর্ণনা করে শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক আগে আল জাজিরাকে বলেন, “গাজার সর্বত্র ইসরায়েলি হামলার শব্দ শুনে আমরা ভয়ে ঘুম থেকে উঠেছিলাম।”

তিনি বলেন, “আমরা ভয়ে ছিলাম, আমাদের বাচ্চারা ভয়ে ছিল। আমাদের আত্মীয়স্বজনরা আমাদেরকে খোঁজখবর নিতে অনেক ফোন করেছিলেন। আর অ্যাম্বুলেন্স এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় ছুটে যেতে শুরু করে। পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের দেহাবশেষ” হাতে নিয়ে হাসপাতালে আসতে শুরু করে।”

“ষোলটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আমাদের মাথার ওপরে ভারীভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং ড্রোনও। আমরা সত্যিই, সত্যিই ভয়ে আছি,” তিনি বলেন।

আবু রিজক বলেন, “হামলা এবং হতাহতের এই ঢেউ এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজার পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

তিনি বলেন, “আপনি যদি এখন গাজার কোনও হাসপাতালে থাকেন, তাহলে সর্বত্র রক্ত ​দেখতে পাবেন। আহত এবং মৃতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য গাধার গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতি অনুসারে, মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাস আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর এটি করা হয়েছে।

ইসরায়েল এখন থেকে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির সঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এতে আরও বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলার পরিকল্পনা আইডিএফ সপ্তাহান্তে উপস্থাপন করেছে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, হামলা চালানোর আগে ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল।

১ মার্চ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তির পর আলোচকরা এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

আমেরিকা প্রথম ধাপের মেয়াদ এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে হামাস কর্তৃক বন্দি এবং ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি বন্দিদের আরও বিনিময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কিন্তু আলোচনা প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, পরোক্ষ আলোচনায় উইটকফ কর্তৃক নির্ধারিত চুক্তির মূল বিষয়গুলো নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

ইসরায়েলের হারেৎজ সংবাদ সংস্থা শেয়ার করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) বলেছে যে, ‘‘যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর সকল প্রচেষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করার পর ইসরায়েল গাজায় নির্মূলের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।“

পিআইজে বলেছে, নেতানিয়াহু এবং তার `রক্তপিপাসু নাৎসি সরকারের’ নতুন আক্রমণ ইসরায়েলকে প্রতিরোধের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেবে না, না স্থলে না আলোচনায়।

“আমরা নিশ্চিত করছি যে নেতানিয়াহু এবং তার বর্বর সেনাবাহিনী ১৫ মাসের অপরাধ ও রক্তপাতের মধ্যে যা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা আর কখনো তা অর্জন করতে পারবে না। আমাদের নিপীড়িত জনগণের দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের মুজাহিদিনদের সাহসের জন্য ধন্যবাদ,” গ্রুপটি বলেছে।

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। যখন হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১১৩৯ জনকে হত্যা করে। ওই সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৪৮ হাজার ৫৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ১২ হাজার ৩২ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা আপডেট করে ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আনুমানিক ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ঘাটতি রয়েছে।