মাছের ড্রামে পাচার হচ্ছে রোহিঙ্গা!

কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত স্বপরিবারে ক্যাম্প থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্য নিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ছে। কিছু রোহিঙ্গা উন্নত জীবন যাপনের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত আত্মীয় পরিজনের আহ্বানে ক্যাম্প ছাড়ছে। কিছু রোহিঙ্গা শহর, বন্দরে গার্মেন্টস বা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে স্থায়ী বসবাসের আশা নিয়েও ক্যাম্প ত্যাগ করছে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্যাম্প পালানোর প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও প্রতিরোধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। চলতি মাসে মাছ সরবরাহে ব্যবহৃত ড্রামের ভিতরে লুকিয়ে সড়ক পথে পালানোর সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক অভিযানে ১০ জন রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক এক শ্রেণির রোহিঙ্গা দালাল মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর জন্য রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজিবি সদস্য টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ চরাঞ্চল থেকে ১১জন রোহিঙ্গাকে আটক করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর করেছে। দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করেছিল বলে তারা জানিয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের ১২নং ব্লকের কর্মরত এনজিও সংস্থা ইপসার এক কর্মকর্তা রবিবার ১৩ জানুয়ারি সকালে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে বলেছেন, ‘বেশ কিছু রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে যে কোন সময়ে ক্যাম্প ত্যাগ করতে পারে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইপসার ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।’
কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা রশিদ আহমদ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পালানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা আছে যারা এ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়নি। এমনকি তারা সরকারিভাবে প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রীও পায়নি। এসব রোহিঙ্গা জীবিকার তাগিদে ও উন্নত জীবন যাপনের আশা করে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমিত একটি জায়গায় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। এসব রোহিঙ্গা কখন, কে, কোথায় যাচ্ছে তার কোনো হদিস নেই। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শহরের গার্মেন্টস অথবা বিভিন্ন কাজের অজুহাতে ক্যাম্প ছাড়ছে। অনেকে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনের আহ্বানে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, ‘রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। যেসব রোহিঙ্গা নতুন করে এসে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে তারাই মূলত বিভিন্ন কৌশলে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে।’
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, ‘সড়ক পথে ৪টি পুলিশ চেকপোস্ট দিয়ে বিশাল রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তথাপি যেসব রোহিঙ্গা পালাতে গিয়ে ধরা পড়ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধূরী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দক্ষতায় যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয় তাহলে ক্যাম্প পালানো রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পালানো প্রবণতা প্রতিরোধে আরো স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।