বাংলাদেশ ১৮০০ সৈন্য পাঠাচ্ছে সৌদিতে

উষ্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তির আওতায় দেশটির বিরোধপূর্ণ প্রতিবেশী ইয়েমেনের সীমান্তে মাইন অপসারণের কাজে বাংলাদেশ ১৮০০ সৈন্য পাঠাচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা।
চুক্তি নিয়ে নানা আলোচনার প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগেও ভালো ছিল। এবার নতুন উচ্চতায় যাবে। শেখ হাসিনার সরকার দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনো কাজ করবে না।
তিনি জানান, এক সামরিক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দিতে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হয়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে ৩৪ দেশ নিয়ে সৌদি আরব সামরিক জোট গঠন করে। সেই সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বিরোধিতা ওঠে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ কখনই তার পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনবে না। তিনি বলেছিলেন, মক্কা শরিফে হামলা হওয়া ছাড়া আর কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ যাবে না।
এই চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের ব্যত্যয় ঘটছে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রবীণ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, খেয়াল রাখতে হবে যেন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয়। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সহজ হিসাবে দেখা যায়, এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যের বিরোধপূর্ণ রাজনীতিতে বাংলাদেশ একটি পক্ষ নিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান এবং পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে যেন এর কোনো বিরোধ না ঘটে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এটা খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু। কারণ আমাদের সংবিধানে রয়েছে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি এবং বিদেশনীতি হলো সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বা অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নীতি আমাদের নেই।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী জেনারেল আজিজ আহমেদ সৌদি আরব সফর করেন এবং সেই সময়ই এই চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সফর সম্পর্কে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিয়াদে সৌদি আরবের সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল-আয়েশের সঙ্গেও বৈঠক করেন সেনাবাহিনীপ্রধান। পরে, সৌদি আরব ও ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মাইন অপসারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তিও প্রস্তুত করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়নে প্রায় ১৮০০ সদস্য মাইন অপসারণ কাজে নিয়োজিত হবে।
এরই মধ্যে সৌদি আরবের ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনে (আইএমসিটিসি) বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ চারজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সৌদি আরবের বিভিন্ন সামরিক খাতে নিয়োজিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা কাজের পাশাপাশি সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণও গ্রহণ করতে পারবেন।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ বলেছেন, চুক্তি যথাসময়ে হচ্ছে এবং তারা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তারিত জানাবেন।