ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২


মওদুদীবাদ ভুয়া-নতুন দল গড়তে চান বহিষ্কৃত মঞ্জু


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৫০

আপডেট:
৬ মে ২০২৫ ০০:৫১

মওদুদীবাদ ভুয়া-নতুন দল গড়তে চান বহিষ্কৃত মঞ্জু


একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চাওয়া ও দলীয় সংস্কারের দাবি পূরণ না হওয়া নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে ভাঙনের মুখে পড়েছে তা প্রকাশ্য হতে চলেছে। এই দুই ইস্যুতে গত শুক্রবার জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন দলটির প্রভাবশালী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে জামায়াতে

ইসলামী স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখালেও ভেতরে ভেতরে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি অনেক নেতা। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে শুক্রবার রাতেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে, যিনি সরব ছিলেন সংস্কার দাবিতে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় তিনি জানিয়েছেন নতুন দল গড়ার ও সে দল নিয়ে তিনি কী স্বপ্ন দেখেন সেসব ভাবনার কথা। একইদিন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার চাওয়া নেতাদের শনাক্ত করে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।



দলের এমন কঠোর অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের বলেন, সময় হলে জানতে পারবেন। সিদ্ধান্ত নিলে তো গণমাধ্যমকে জানানো হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের ওই নেতারা জানান, দলের অবস্থান পাল্টানোর কোনো সুযোগ নেই। একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোনো কারণ নাই। বরং দলের মধ্যে সংস্কার চান এমন নেতাদের বের করে দেওয়া হবে।

মোবাইল ফোনে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে মঞ্জু বলেন, জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, দেশের উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণ, সুশাসন, সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন জামায়াতে ইসলামীর অধিকাংশ তরুণ প্রজন্ম। তারা নতুনভাবে পথ চলতে চান। স্বাধীনতাবিরোধীর অপবাদ মাথায় নিয়ে জামায়াতে থাকবেন না তরুণ প্রজন্ম। মওদুদীবাদকে তারা মনে করেন ভুয়া মতবাদ। তারা সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে নতুন দল গড়বেন। তবে নাম চূড়ান্ত হয়নি।

১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে উপমহাদেশে যাত্রা শুরু করা দলটির প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ আবুল আলা মওদুদী। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নামকরণ করা হয় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান। বাংলাদেশ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী, যার প্রধান ছিলেন গোলাম আযম। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়। তবে কয়েক মাস পরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামী ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় মওদুদীর ধারায়।


২০১৮ সালের অক্টোবরে আদালত দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। পরে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন স্থগিত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সংসদে বলেন, আদালতে মামলা থাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধ করতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং মঞ্জুকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দলটিতে ভাঙন স্পষ্ট হয়।

জামায়াতের মধ্যে সংস্কারপন্থি হিসেবে যারা পরিচিত তারা কী চান এমন প্রশ্নে মঞ্জুকে বলেন, এতদিন তিনি যা চেয়ে এসেছেন, তা জামায়াতের মধ্যে থাকা তরুণ প্রজন্মের চাওয়া। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর যাদের জন্ম তারাই বেশি সংস্কার চান। তারা স্বাধীনতাবিরোধী অপবাদ নিয়ে থাকতে চান না। তারা আধুনিক চিন্তাচেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে স্বাধীনতার পক্ষে একটা উদার গণতান্ত্রিক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের সংস্কার ও নতুন পথচলায় কারা সম্পৃক্ত হতে পারেন জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, স্বাধীনতার পর যাদের জন্ম তাদের বেশিরভাগই এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকবেন। সঙ্গে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও কেউ কেউ থাকবেন।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে অবস্থান জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। ১৯৮৮ সালে শিবির এবং ২০০৪ সালে জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া মঞ্জুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, মওদুদীবাদ সাপোর্ট করেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, মওদুদীবাদ বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নাই। এমন বস্তাপচা মতবাদ নিয়ে তরুণ প্রজন্ম চলতে চান না। তারা আধুনিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে চলতে চান। নতুন যে দল কিংবা ফ্রন্ট গড়বেন তা কি আন্তর্জাতিক জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমন প্রশ্নে মঞ্জু বলেন, না না না। কী যে বলেন! তা হবে কেন? নতুন দল হবে সম্পূর্ণ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে; যার চিন্তাচেতনায় থাকবে দেশপ্রেম। নতুন চিন্তাচেতনা নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীর সঙ্গে কখনো আলোচনা করেছেন কি না জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, তিনি ভালো কাজ করতে চান। তার সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। হাই-হ্যালো হয়েছে। এর বাইরে নতুন চিন্তাচেতনা নিয়ে আলাদাভাবে বসা হয়নি।