ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২


ডাকসু নির্বাচন বয়কট করতে পারে ছাত্রদল


২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:২৪

আপডেট:
৬ মে ২০২৫ ০০:৪৬

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বয়কট করতে পারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদলের ন্যূনতম দাবি পূরণ না করলে দলের এই সহযোগী সংগঠনটিকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেবে বিএনপি।

ছাত্রদলের প্যানেল নির্ধারণ ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ও মনোনয়ন বাছাই।

নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩ মার্চ হলের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটগ্রহণ হবে ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

তফসিল ঘোষণার একদিন পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের কাছে সাত দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ওই সাত দফার মধ্যে রয়েছে— ক্যাম্পাস ও হলে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ডাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা, ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে করা, ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়ানো, ডাকসু সভাপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতন হয়েছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও ডাকসুর নির্বাচন পরিচালনা ও উপদেষ্টা কমিটিসহ এ বিষয়ে গঠিত সব কমিটি পুনর্গঠন।


এসব দাবির একটিও পূরণ না হওয়ায় ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দোটানায় ছিল ছাত্রদল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভয়াবহ’ বিপর্যয়ের পর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও ‘চূড়ান্ত’ সিদ্ধান্ত দিতে পারছিলেন না।

সহাবস্থান নিশ্চিতে ডাকসু নির্বাচন ৩ মাস পেছানোর দাবি ছাত্রদলের
তবে গত বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রদল এবং শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে তারা। ডাকসু ও হল সংসদের ২৫৯টি পদের বিপরীতে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪৪৭টি ফরম বিক্রি হয়। জমাও পড়েছে বেশ কিছু ফরম।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য ছাত্রদল নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে তারা নাও থাকতে পারে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বেধে দেওয়া ক্রাইটেরিয়া (মানদণ্ড) অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিতে থাকা বেশিরভাগ নেতা ভোটার এবং প্রার্থী হতে পারছেন না।

এদের কেউ ঠেকে যাচ্ছেন বয়সের কারণে, আবার কেউ ঠেকে যাচ্ছেন নিয়মিত ছাত্র না হওয়ার কারণে। অর্থাৎ ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩০ বছর বয়সসীমা ও নিয়মিত ছাত্র হওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে দেওয়ায় ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভীর রেজা রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীসহ কমিটির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা প্রার্থী হতে পারছেন না। ফলে ঢাবি ছাত্রদলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতারা প্রার্থী হচ্ছেন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে।

ডাকসু নির্বাচন
জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভীর রেজা রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদলের অনেক নেতা আছেন, যাদের বয়স ত্রিশের মধ্যে কিন্তু অনার্স পাস করার পর এখন পর্যন্ত মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেননি। আবার অনেকে আছেন, যারা ভর্তি হয়েছেন কিন্তু বয়স ত্রিশের ওপরে। এভাবে ছাত্রদলের প্রায় ৫০ শতাংশ নেতা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।’

সূত্রমতে, ডাকসু নির্বাচনে হলগুলোতে ভোট কেন্দ্র করার সিদ্ধান্তকে আরেকটি বড় বাধা হিসেবে দেখছে ছাত্রদল। তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র করা। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ডাকসুর জন্য ছাত্রদলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু
ছাত্রদল বলছে, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান যেখানে নিশ্চিত হয়নি, সেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ ছাত্ররা হলে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে না। সুতরাং একাডেমিক ভবনে কেন্দ্র না করে, হলে কেন্দ্র করলে ডাকসু নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকা ছাত্রদলের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের প্যানেল নির্ধারণ ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ছাত্রদল সাত দফা দাবি দিয়েছে। সেই দাবিগুলো পূরণ না হলে এবং সব ছাত্র সংগঠনের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না হলে আমরা নির্বাচন বয়কট করতে পারি। এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে— এরকম নয়।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ডাকসু নির্বাচনে যাচ্ছি, ইতিবাচকই থাকতে চাই। এরইমধ্যে অনেকগুলো ধাপ পার করে এসেছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’