ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক বিদেশে রাজধানী দাপাচ্ছে সহযোগীরা

খালেদের ক্যাডাররা এখন হাত মিলিয়েছে মানিকের সঙ্গে, চালিয়ে যাচ্ছে টেন্ডার ও চাঁদাবাজি


৬ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:১৫

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ১৯:২৫

ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রক, টেন্ডার জগতের ডন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হলেও তার সহযোগীরা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। খালেদ মাহমুদ ভুঁঁইয়া ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অস্ত্রবাজির সাম্রাজ্য বিস্তারে প্রভাবশালী নেতাদের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করতেন। সঙ্গে রাখতেন অস্ত্রধারী ক্যাডার। খালেদ গ্রেফতার হলেও তার অস্ত্রধারী ২০ ক্যাডার এখনো অধরাই রয়েছেন। এই ২০ ক্যাডারের কেউ বিদেশে পালিয়েছেন, কেউবা দেশেই আত্মগোপনে আছেন। তবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন অবাধে।


খালেদকে যারা গত ১০ বছর টেন্ডার সিডিউল ছিনতাই থেকে শুরু করে সকল অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন, তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ভবন। অভিযোগ রয়েছে, তারা এখন হাত মিলিয়েছে শীর্ষসন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সঙ্গে। খালেদের ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার তার আপন ছোটো ভাই মাকসুদুর রহমান মাসুদ ভুঁইয়া এখনো অনেক ব্যবসায়ীকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খালেদের আরেক ছোটো ভাই হাসান ভুঁইয়া, যিনি কমলাপুর, রাজউক, ক্রীড়া ভবনসহ সব টেন্ডারের ক্যাশিয়ার, তিনিও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। জানা গেছে, এখনো খালেদের দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় অপরাধীরা সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। গণপূর্ত ইএম ডিভিশনে খালেদের মূল সহযোগী নুরুন্নবী ভুঁইয়া রাজু ওরফে ডন রাজু দিব্বি ভবন নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন ও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করছেন পিডব্লিউডির টেন্ডার প্রক্রিয়া। ক্রীড়া ভবনের ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খালেদের ক্রীড়া ভবন নিয়ন্ত্রক মাজহারুল ইসলাম তুহিনও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

জানা গেছে, গত ১০ বছরে ক্রীড়া ভবনে এই চক্রের ভয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা সিডিউল কেনা দূরে থাকুক, ভয়ে ভবনেও আসত না। তুহিন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ক্রীড়া সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজউক নিয়ন্ত্রণের জন্য খালেদের ছিল বিশাল অস্ত্রধারী বাহিনী।

এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক গোফরান গাজী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেম খাঁ, মতিঝিল ও শাহজাহানপুরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী কিসলু, রামপুরার রইছ উদ্দিন, শাহজাহানপুরের বি এম অংকুরসহ আরো অনেকে। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের অপরাধে গোফরান গাজীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারও করেছে কয়েক বার। তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল, পরে বহিষ্কারাদেশ উঠিয়ে নেওয়া হয়।

এছাড়া যারা সব সময় স্লোগান দিতেন ‘খালেদ ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘খালেদ ভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—সেই অপরাধী ওমর ফারুক, আবুল কাশেম খাঁ, গাজীসহ সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তারা এখন ভোল পালটে খালেদকে গালি দিচ্ছে সন্ত্রাসী মানিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রিজবী হাসান রিবী, অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা কবির হোসেন, জহির উদ্দিন বাবরসহ খালেদের রয়েছে বিশাল অস্ত্রধারী বাহিনী। তাদের মাধ্যমেই খালেদ অপরাধ জগত্ নিয়ন্ত্রণ করতেন, জায়গা দখল, ফ্ল্যাট দখলসহ কেউ শিডিউল না দিলে এই বাহিনী পাঠিয়ে দেওয়া হতো তাদের কাছে। তাদের বলা হয় খালেদের হেলমেট বাহিনী। খালেদের ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার মাকসুদুর রহমান মাসুদ ভুঁইয়া, হাসান ভুঁইয়া, রাজু, তুহিন, ফারুক গংদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া এখন দুদক হেফাজতে।