এরশাদের বাড়ি থেকে বেরুচ্ছেন না বিদিশা

*বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোজা বাসায় ঢুকে যান বিদিশা
*বিদিশার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় থাকা নিয়ে বেশ নাটকীয় ঘটনা ঘটছে
* গাড়িচালকের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ আনেন এরিক
* আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে দাবি এরিকের
*আমাকে খেতে দেওয়া হতো না দাবি এরিকের
বিদিশাকে নিয়ে বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ প্রয়াত এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে যান বিদিশা। সেখানে থাকেন
তার সন্তান এরিক। ছেলে চিকেন ফ্রাই খেতে ফোন করেছিল এমন তথ্য জানিয়ে একটি টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে উপস্থিত হন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোজা বাসায় ঢুকে যান তিনি। সেই থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত বিদিশা সেখানেই ছিলেন। জাপার নেতারা না পারছেন তাকে সেখান থেকে বের করতে, না তার অবস্থান মেনে নিতে।
এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না জাপার কোনো নেতাই। ফোন ধরলেও পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে তারা কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এদের মধ্যে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এরিককে দেখতে যাওয়া ও তার সঙ্গে থাকতে চাওয়া অসিলা মাত্র। তিনি (বিদিশা) আসলে এখন সম্পত্তির জন্য এমন করছেন। জাপার কিছু নেতাও এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন। এরা সব সময়ই দলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেন।
এ ব্যাপারে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন বলেন, চেয়ারম্যান বলেছেন সময়মতো গণমাধ্যমকে জানাবেন। আমরাও সেই অপেক্ষায় আছি। এখনো এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসার এক পুরনো সহকারী জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এরিককে দেখার কথা বলে বাসায় ঢুকে আর বের হচ্ছেন না বিদিশা। সেখানে তিনি চার দিন ধরে অবস্থান করছেন। এতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন এরশাদ পরিবারের সদস্য ও জাপার নেতারা। না পারছেন তাকে বের করে দিতে আবার না পারছেন মেনে নিতে। আপাতদৃষ্টিতে ছেলে এরিকের কাছে মা আসতে বাধা দেওয়া অনেকটা অমানবিক মনে করা হচ্ছে। আবার এরশাদ যাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন তার অবস্থানও ভালোভাবে দেখছেন না পরিবারের লোকজন।
আবার গত চার দিন ধরেই বিদিশার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় থাকা নিয়ে বেশ নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। বাসার দুই সহকারী জানান, বৃহস্পতিবার বাসায় ঢোকার পরদিন শুক্রবার সকালে এরিকের জন্য কিছু খাবার নিয়ে গেলে বিদিশার ব্যক্তিগত সহকারী রাজিবকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দুপুরে বিদিশার আইনজীবী কাজী রুবাইয়াত হোসেন খাবার নিয়ে গেলে তাকেও আটকে দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে কিছু টেলিভিশনকে ডাকেন বিদিশা। এ সময় কথা বলেন এরিক ও বিদিশার আইনজীবী। তবে বিদিশা নিচে নামেননি। এ সময় বিদিশার আইনজীবী অভিযোগ করেন, অসুস্থ এরিককে নিয়ে জাপা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি এরিকের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এরিক ও তার মাকে একসঙ্গে থাকার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও জাপার নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় এরিক নিচে নেমে আসেন। তিনি এক গাড়িচালকের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ওই চালক তার বাবার গাড়ি চালাত। একা একা থাকাটা আসলে প্রবলেম। মা আছে। থাকব একসঙ্গে। একা একা থাকার সমস্যা তো আছেই। কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
পরে গত শনিবার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ করেন বিদিশা। এ সময় তিনি টেলিফোনে সাংবাদিকদের জানান, গত তিন দিন ধরে বারিধারায় এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে এরিককে নিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন তিনি। কোনোক্রমেই এরিকের কাছ থেকে আলাদা করা যাবে না তাকে। তিনি অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত নিচে থেকে কোনো লোকজন কাউকে ভেতরে আসতে দিচ্ছে না। আমার লাশ বের হয়ে গেলেও আমার ছেলেকে নিয়ে কিছু হতে দেব না। আমি মুখ খুললে কাদের সাহেবের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। এসব বিষয়ে জানতে গতকাল ফোন করলে কল রিসিভ করেননি বিদিশা।
প্রেসিডেন্ট পার্কের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, শনিবার দুপুরে বিদিশা সিদ্দিকের কয়েকজন স্টাফ এসে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে যান প্রেসিডেন্ট পার্কে।
পরে গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তা পাঠান বিদিশা। সেই ভিডিও বার্তায় এরিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে উদ্দেশ করে কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ধারণকৃত ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় এরিক বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমি এরিক বলছি। আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে খেতে দেওয়া হতো না। ড্রাইভার আমার শরীরে হাত তুলেছে। আমার লিগ্যাল গার্ডিয়ান চাচা জিএম কাদের না, আমার মা। সে ক্ষেত্রে ওনার তো রাইট নেই এ রকম টর্চার করা। মাকে আমি বাসায় নিয়ে এসেছি। এখন আমরা ভালো আছি। নিচে পুলিশরা ঝামেলা করছে। আমার বাড়ির লোকদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। আপনি একটু বলে দিন যেন পুলিশরা আমাদের ঝামেলা না করে।’
এ নিয়ে গতকাল বার বার ফোন করলেও ধরেননি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে শনিবার দুপুরে তিনি বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিদিশা এবং এরিককে আটকে রাখার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিদিশা ও এরিকের বিষয়টি সময়মতো গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রেসিডেন্ট পার্কের দুজন সহকারী জানান, বিদিশা তার নিজের কিছু লোকজনকে বাসায় ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। এটা সন্দেহের চোখে দেখছেন এরশাদ পরিবারের লোকজন। তারা এটাকে বিদিশার দুরভিসন্ধি হিসেবে দেখছেন। এরশাদ পরিবারের বাইরে কেউ যাতে বাসায় প্রবেশ করতে না পারে, তেমন নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় এরিকের সঙ্গে থাকলেই এরশাদের সম্পত্তি বিদিশার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান জাপার এক নেতা। ওই নেতা এরশাদ তার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি যে ট্রাস্টের নামে দিয়ে গেছেন, সেই ট্রাস্টের একজন সদস্য। তিনি বলেন, এরশাদের বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা, স্থাবর অস্থাবরের নিয়ন্ত্রণ বিদিশার পাওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। এরশাদ তার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পদ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের নামে দিয়ে গেছেন। সেখানে ট্রাস্টি হিসেবে যারা রয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। এরশাদের মৃত্যুর পর সেখানে চেয়ারম্যান হয়েছেন জিএম কাদের। এই ট্রাস্টের ব্যয়ের ক্ষেত্র বলা হয়েছে এরিকের ভরণপোষণ। এরপর উদ্বৃত্ত থাকলে জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে কোনোভাবেই কোনো সম্পদ হস্তান্তর বা বিক্রি করার সুযোগ নেই। এমনকি ট্রাস্টে অপর সন্তান সাদ এরশাদ কিংবা স্ত্রী রওশনের কোনো স্বত্ব কিংবা অধিকার রাখেননি। ট্রাস্টের কাগজেও উল্লেখ রয়েছে বিদিশা এর মধ্যে জড়াতে পারবেন না। এমনকি আইনগতভাবে তিনি প্রেসিডেন্ট পার্কেও অবস্থান করতে পারেন না।