ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


ধর্ষণে মা হওয়া ছাত্রীর পরিবার একঘরে


১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৯

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০১:২৭

ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণের শিকার ১৩ বছরের এক স্কুলছাত্রী মা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর রাতে ঠাকুরগাঁও মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে একটি মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়েছে ওই কিশোরী। মা-শিশু দুজনেই সুস্থ্ আছে।

তবে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার পড়েছে চরম বিপাকে। ‘ধর্ষক ও ধর্ষিতা আলাদা ধর্মের হওয়া ও ধর্ষক পলাতক থাকায় এখনো বিয়ে বা অন্য কোনো সমাধান হয়নি। হতদরিদ্র পরিবারটির বাড়িতে কেউ যায় না, তাদের কেউ কাজে ডাকে না। নবজাতকের ভরণপোষণের ব্যয় বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের কাছে। এই অবস্থায়

শিশুটিকে দত্তক দিতে চায় পরিবারটি।

স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, ঘটনাটি আরও জটিল হয়েছে দুজন দুই ধর্মের হওয়ায়। স্থানীয়রা বিষয়টির কোনো সমাধান না দেওয়ায় নবজাতক নিয়ে গত শুক্রবার দুপুরে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্র মোহিন চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে ওই স্কুলছাত্রী।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধুকুরঝাড়ি টাকাহারা গ্রামে প্রতিবেশী কলেজছাত্র মোহিন প্রলোভন দেখিয়ে ৫ম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলে। পরে ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে মোহিনের পরিবার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। পরে অবশ্য মামলা করেন ওই স্কুলছাত্রীর বাবা। এরপর থেকে পলাতক রয়েছে মোহিন।



মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, প্রধান আসামি মোহিন বর্তমানে পলাতক আছে। তাকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে। নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের পরেই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।

এদিকে গত রবিবার ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে গেলে তার বাবা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে তার মেয়ে ছেলের বাড়িতে নজরবন্দি অবস্থায় আছে। তাকে ওই বাড়ির একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি দ্রুত এ ঘটনার সমাধান চান।

মায়ের অভিযোগ, সমাজপতিরা তাদের একঘরে করে রেখেছে। প্রতিবেশীরা নানা ধরনের মন্তব্য করছে। তাদের দেখলে দূরে চলে যাচ্ছে। তিনি জানান, সামাজিক এসব চাপের পাশাপাশি নবজাতকের ভরণপোষণও করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তাই শিশুটিকে দত্তক দিতে চান।

ওই কিশোরীর বড় বোন বলে, একদিকে অর্থের অভাবে জেএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারিনি। অন্যদিকে শিক্ষকরা নিরুৎসাহিত করায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। স্কুলের সহপাঠীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিশতেও নিষেধ করেছে। তাই এখন লেখাপড়াতেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।



তবে ওই পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয়রা। আর ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, ঘটনাটি তার জানা নেই। স্থানীয় মাতব্বর মতিউর রহমান মতি বলেন, মুসলমানের ঘরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাচ্চা জন্মেছে। আমরা কীভাবে ওই পরিবারের বাড়িতে যাতায়াত করব? তাই তাদের বাড়িতে মানুষজন কম যায়। তাদের একঘরে করে রাখা হয়নি।

স্থানীয় ধনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সমর কুমার চ্যাটার্জি বলেন, সমাজচ্যুত করে রাখার খবর তার জানা নেই। তবে এমন পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানে আইনি সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।

তবে স্থানীয় প্রতিবেশী জবেদা বেগম ও আব্দুর রশিদ বলেন, শিশু মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সেটা অনেকে বিবেচনা করছে না। আবার ধর্মের বিষয় জড়িত বলে সমাধানও জটিল হয়ে পড়েছে। পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে। ভালো করে কেউ কথা বলছে না।

বিষয়টি নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সমাজসেবা অফিসার ফিরোজ সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নবজাতক ও তার মায়ের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। সংশ্লিষ্ট কেউ বিষয়টি জানালে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হওয়া ও অভিযুক্ত ছেলেটির পলাতক থাকার কথা আমি জানি। তবে সন্তান জন্ম ও একঘরে করে রাখার বিষয়ে আমার জানা নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে বিবেচনা করা হবে।