ফতুল্লার অঘোষিত নিয়ন্ত্রক
বিএনপির মীর সোহেল এখন প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা

একসময় ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সভাপতি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী। প্রভাবশালী সাংসদের আশির্বাদে তিনি নিজেই এখন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বনে গেছেন।
দীর্ঘদিনে সুনাম অর্জন করা দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া হুশিয়ারির পরেও নারায়ণগঞ্জে মীর সোহেলের মত নেতারা কিভাবে জেলা ও থানার ভাইটাল পদ পায় এমন প্রশ্ন এখন তৃণমূলসহ সাধারণ মানুষের মুখে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মীর সোহেল আলী এক সময়ে বিএনপির রাজনীতি করতেন। ছিলেন ছাত্রদলের ফতুল্লা থানা কমিটির সভাপতি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে হলে গোড়া ও পূর্ব ইতিহাস থাকার বিধান থাকলেও ছাত্রদল সভাপতিকে কিভাবে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনা হয়েছে সেটা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।
মুন্সিগঞ্জ থেকে ফতুল্লায় আসার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে মীর সোহেলের বাবা মীর মোজাম্মেল আলী গ্রাম সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় থেকেই মীর সোহেল তার ছোট ভাই ফয়সাল, ফুফাতো ভাই হারুন অর রশিদ আরিফ ওরফে বাঘা আরিফ বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
১৯৯১ সালে ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের আহবায়ক নির্বাচিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন মীর সোহেল। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফতুল্লা থেকে বাস যোগে মিছিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিআইটিতে বিএনপির এক সমাবেশে যাওয়ার পথে চাষাঢ়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মীর সোহেলকে বাস থেকে নামিয়ে মারধর করে। এ ঘটনার কিছুদিন পর মীর সোহেলের ছোট বোনজামাতা টিপু সুলতানের মধ্যস্থতায় ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে এক জনসভায় শামীম ওসমানের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন মীর সোহেল।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সুবিধা বুঝে তৎকালীন সাংসদ কবরীর বলয়ে চলে যান মীর সোহেল। তার বাবা মীর মোজাম্মেল আলী নিজে সাংসদ কবরীর হাতে মীর সোহেলকে তুলে দেন। সাংসদ কবরীর বলয়ে চলে যাওয়ার পর ফতুল্লার দাপাঘাট এলাকার অবস্থিত কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা রশিদ ও কাশেমের ঘাট এবং দোকান দখল করে নেয়। এ ঘটনায় মীর সোহেল ফতুল্লা থানা যুলীগের সভাপতি পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।
সরকারি দলের সাইনবোর্ড ও ক্ষমতার দাপটে মীর সোহেল এখন ফতুল্লার অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ফতুল্লা মডেল থানার পাশে একটি অফিস তৈরি করে সেখানে বসেই সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ একে এম শামীম ওসমান নিজ সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংযত হয়ে রাজনীতি করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের অপকর্ম করে তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা যেমন গ্রহণ করা হবে তেমনি আইনও তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা অওয়ামী লীগের বেশ কজন নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের মতে, বিএনপি থেকে আগত মীর সোহেলের মত নেতারা যতদিন আওয়ামী লীগে থাকবে ততদিন এ দলে শৃঙ্খলা ফিরবে না। মীর সোহেলের বাবা বিএনপির সময় গ্রাম সরকার ছিল। এখন তিনি ফতুল্লা থানা কমিনিটি পুলিশিং এর সভাপতি। বাবা-ছেলে মিলে পুরো ফতুল্লা থানা নিয়ন্ত্রণ করছে। এমপি তাদের পাওয়ার দিয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবদলের সভাপতি মীর সোহেল আলী বলেন, ‘আমি বিএনপি করছি বাধ্য হয়ে। ৩ বছর যাবত বিএনপি করলাম আর আওয়ামী লীগ করছি ২৩ বছর। আল্লাহ আছে, শেষ বিচার হবে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।’