শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত যুবলীগের নেতা মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন পর্যন্ত তার প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রক যুবলীগের শফিক

শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত যুবলীগের নেতা মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন পর্যন্ত তার প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে শফিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। মামলার এজাহারে শফিকুলের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, শফিকুল ইসলাম কেন্দ্রীয় যুবলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। শফিকুল ইসলাম ছাত্রজীবনেই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজ হিসেবে। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষা ভবনে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে পিটুনি খেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের ছাত্র ও তৎকালীন মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল। গ্রেফতার অবস্থায় পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হয়েছিল।
এরপর একাধিকবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও শিক্ষা ভবন ছাড়েননি শফিক। ধীরে ধীরে নিজেকে পরিণত করেছেন শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে। ঠিকাদারি শফিকুলের মূল পেশা নয়। তার মূল পেশা টেন্ডারবাজি। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজ যিনি পান না কেন, প্রতিটি টেন্ডারে ৫ শতাংশ কমিশন দিতে হতো শফিককে। এর মাধ্যমেই মূলত তিনি বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। তবে তার বিপুল বিত্তের তথ্য দুদকের হাতে এলেও এখনও প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি। সাড়ে ১৪ কোটি টাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় সেসব তথ্যের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শফিকুল ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত তার আয়কর নথিতে মোট ৭ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখালেও সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণে দুদকের মনে হয়েছে, ওইসব সম্পদের অর্জন মূল্য অনেক বেশি। তদন্তের সময় এ বিষয়ে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মতামতসহ অন্য তথ্য পর্যালোচনা করা হবে।
এসব সম্পদ অর্জনের পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি দুদক। আয়কর নথিতে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন শফিকুল। কিন্তু এত অর্জনের স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। দুদক বলছে, শফিকুল অবৈধভাবে অর্জিত টাকায় এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিকানা পেয়েছেন। দুদকের হিসাবে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন শফিকুল।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য এবং বিভিন্ন গোপন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে শফিকুল ইসলাম অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ অর্জন করেছেন। ওই সম্পদসংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ-প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিধায় তদন্তের সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সঠিক তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ অনেক বাড়বে। শফিকুল ইসলাম তার নিজ নামে বা স্ত্রী-সন্তান কিংবা অন্য কারও নামে আরও সম্পদ অর্জন করেছেন কি না, সে বিষয়েও তদন্তের সময় যাচাই করা হবে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১৬টি মামলা করল দুদক। সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঠিকাদার জিকে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ও একেএম মমিনুল হক সাঈদ এবং যুবলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান এবং কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছে দুদক।