ভূমিহীনদের জমি দখল করে এমপিপুত্রের শিক্ষা-শিল্পপার্ক!

পাবনার বেড়ায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংসদ শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনির বিরুদ্ধে হতদরিদ্র চাষিদের ব্যক্তিগত এবং তাদের ভোগদখলে থাকা নদীভাঙা খাসজমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসী বলছে, এমপিপুত্র রনির নির্দেশ ও উপস্থিতিতে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা’ খাসজমি ভোগদখলকারী দরিদ্র চাষিদের মারধর করে তাদের রোপণ করা ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা এলাকায় বিক্ষোভ এবং প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনি বলছেন, স্থানীয় রাজনীতির কোন্দলের সুযোগ নিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র।
গ্রামবাসীদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি বেড়া উপজেলার পায়না এলাকায় যমুনা নদীর তীরে ২০১২ সালে ৬০ বিঘা জমি কেনেন। এরপর নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের জমি দখলে নিয়ে নেন তিনি। তারপর ক্রমেই ক্ষমতার দাপটে হুমকি ধামকি দিয়ে আশপাশের দরিদ্র চাষিদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত ও খাস খতিয়ানভুক্ত ৯০ বিঘা জমি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করতে থাকেন। হুমকির মুখে গ্রামবাসী জমির দখল না ছাড়ায় গত ১২ মার্চ সকালে সন্ত্রাসী বাহিনী সঙ্গে নিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপণ করা বোরো ধানের চারা নষ্ট করে কাঁটাতারে ওই জমি ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা করেন রনি। এ সময় দরিদ্র চাষিরা বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের বেদম মারধর শুরু করে। কিন্তু এতেও ভয় না পেয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। তারা উল্টো এমপিপুত্রের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটক করে থানায় নিয়ে মামলা দেয়। একইসঙ্গে ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগীদের পুলিশ হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা
১২ মার্চের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মানিক ব্যাপারী বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বাঁধে বানভাসি ও হতদরিদ্র মানুষেরা ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করে। তাদের উচ্ছেদ করার খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। এ সময় এমপিপুত্রের লোকজন এস্কেভেটর দিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপণকৃত ধান মাটিচাপা দিতে শুরু করলে আমি দলীয় পরিচয় দিয়ে নাসিফ শামস রনিকে ফসল নষ্ট না করতে অনুরোধ জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকেও গালিগালাজ করেন।’
অন্যদিকে বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান মানু বলেন, ‘নাসিফ শামস রনি ৬০ বিঘা জমি কিনে সেখানে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আশপাশের সব জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষের তো বটেই আমার দখলে থাকা ব্যক্তিগত জমির ধানও তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মহোদয় সবকিছু জানলেও তিনি কোনোই ব্যবস্থা নেননি।’
তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন এমপিপুত্র নাসিফ শামস রনি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়না এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য জমি ক্রয় করেছি, তা উন্নয়নেরও কাজ চলছে। সেখানে কাউকে উচ্ছেদ বা মারপিটের ঘটনা কখনোই ঘটেনি। স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিংয়ের সুযোগ নিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।’
পুলিশের বিরুদ্ধে এমপিপুত্রের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত শুক্রবার (১২ মার্চ) পায়না গ্রামে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। কারও পক্ষ হয়ে কাজ করার অভিযোগ সত্য নয়।’
আর এমপিপুত্র রনির বিরুদ্ধে জমি দখলের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘নদী তীরবর্তী যে জমি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যক্তিগত না খাস তা যাচাই করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’