অননুমোদিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করল ডিএসসিসি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অনুমোদিত নকশার বাইরে পরিচালিত সব অননুমোদিত রেস্তোরাঁ ও রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে। আজ (২৮ এপ্রিল) এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ডিএসসিসি জানায়, বাতিলকৃত লাইসেন্স নিয়েও কেউ ব্যবসা চালালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএসসিসির অধীন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর অনেকটিতেই রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে বহু রুফটপ রেস্তোরাঁও রয়েছে। এসব অননুমোদিত রেস্তোরাঁ থেকে ঘটেছে প্রাণহানি ও সম্পত্তি ক্ষতির মতো দুর্ঘটনাও।
ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, 'জননিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রেস্তোরাঁগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এতে আমাদের রাজস্বের বড় ক্ষতি হবে, তারপরও ঢাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নিরাপদ ঢাকা গড়তে এ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল।'
তিনি জানান, যেখানে ভুল তথ্য দিয়ে লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল, সেসব রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের নকশার অনুমোদন বাতিল করা হয়নি। কোনো রেস্তোরাঁ যথাযথ নথিপত্রের মাধ্যমে নকশা অনুমোদনের প্রমাণ দিতে পারলে, কর্মকর্তারা সরেজমিনে যাচাই করে তাদের লাইসেন্স পুনঃরায় প্রদান করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রেস্তোরাঁগুলোকে পৃথক চিঠি দিয়েও এ সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বৈধ ট্রেড লাইসেন্সধারী মোট ১ হাজার ২৬টি হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে রুফটপ রেস্তোরাঁ প্রায় ১০০টি।
ডিএসসিসির উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী বলেন, 'পুরো তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে পর্যায়ক্রমে সব অননুমোদিত রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকা রাজস্ব আসে।'
'বর্তমানে ১ হাজার ১৬টি রেস্তোরাঁর লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্স নবায়নের আগে আমরা নিশ্চিত করবো, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছে কি না। নথিপত্র দিতে ব্যর্থ হলে তাদের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ হোটেল-রেস্তোরাঁ উচ্ছেদ অভিযানও চলবে।'
এদিকে, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান ডিএসসিসির সিদ্ধান্তকে 'অযৌক্তিক ও একপাক্ষিক' আখ্যায়িত করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের পথে বসাবে। আমাদের ব্যবসা রাতারাতি গড়ে ওঠেনি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ জীবিকা হারাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বেইলি রোডের ঘটনার পর পূর্ববর্তী সরকারের সময় এ সমস্যা সমাধানে একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছিল। দুটি বৈঠক হলেও সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হয়নি।'
'আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আগামীকাল আমাদের করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করবো।'
সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইমরান। তিনি বলেন, 'আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ফুড ভ্যান বসিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিলে, সরকার কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়? এতে নতুন ধরনের চাঁদাবাজির সুযোগ সৃষ্টি হবে।'
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে দেখা যায়, ভবনটিতে থাকা আটটি রেস্তোরাঁর কোনোটিরই যথাযথ অনুমোদন ছিল না।
ঘটনার পর ডিএসসিসি ও রাজউক যৌথভাবে নগরজুড়ে অবৈধ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালায় এবং জরিমানা করে। তবে সময়ের সঙ্গে সেই তৎপরতা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে বৈধভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে হলে অন্তত সাতটি সরকারি সংস্থার অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় মাত্র ১৩৪টি রেস্তোরাঁ সরকারের সব ধরনের অনুমোদন ও ছাড়পত্র পেয়েছে। এর মধ্যে ১২৮টি দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২১ সালের জরিপ অনুসারে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজারটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মাত্র ৮৫২টি সরকারি মালিকানাধীন, বাকি সবই বেসরকারি।