জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ

আজ বাংলা সাহিত্য জগতের প্রবাদপ্রতিম পুরুষ আমাদের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে কবির জন্মদিন। আজ রবিবার (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২) যথাযোগ্য মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মবার্ষিকীর এবারের প্রতিপাদ্য ‘চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’।
কর্মসূচি অনুযায়ী, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ সকাল ৬:১৫টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা সকাল ৬.৩০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান-এর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান-এর সভাপতিত্বে কবি’র সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ সালেকীন) অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন। এছাড়া, সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।
এছাড়া, কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কবি নজরুল এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, যখন গোটা উপমহাদেশ ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কবির বিদ্রোহী সত্তা অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে; ক্ষুরধার লেখনীতে ভাঙতে চায় অত্যাচারীর শৃঙ্খল।
আরও গৃহীত কর্মসূচি: জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। আজ বিকাল ৩টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই আয়োজনের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণিজনদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। আলোচনা, নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ নানা আয়োজনে সাজানো থাকবে তিন দিনের এই আয়োজন। এছাড়া ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিন দিন ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। এদিন সকালে জাতীয় কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। পরে বিকাল ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে নজরুল বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। দুই দিনের উৎসবের আয়োজন করেছে ছায়ানট। আজ সন্ধ্যায় শুরু হবে এই আসর। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে থাকছে একক ও সম্মেলন গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘ। আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হবে সংগঠনটির দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব।
প্রসঙ্গত, কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান, পড়ালেখা শুরু করেন মক্তবে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দারিদ্র্যের কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দূর এগোয়নি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই গোটা পরিবারের ভার কাঁধে নিতে হয় তাকে। জীবিকার প্রয়োজনে রুটির দোকানে কাজ নেন। মসজিদের মুয়াজ্জিন, মাজারের খাদেম হিসেবেও কাজ করেছেন। তরুণ বয়সে সেনা সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। করেছেন রাজনীতি। সাহিত্য চর্চার শুরুটাও বালক বয়সে। লেটো দলে যোগ দিয়ে শুরু হয় তার সাহিত্যচর্চা। নজরুলের কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে বিপুল সমৃদ্ধি। দীর্ঘকাল সাহিত্যের নানা অঙ্গণে অসামান্য অবদান রাখার এক পর্যায়ে ১৯৪২ সালে চির বিদ্রোহী রণক্লান্ত নজরুল বাকশক্তি ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিশুর মতো হয়ে যান। এ অবস্থায় ১৯৭২ সালে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নজরুলকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে পিজি হাসপাতালে। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর এখানেই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।