ঢাকা শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ় ১৪৩২


পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনা


২৮ জুন ২০২৫ ১৪:২৮

আপডেট:
২৮ জুন ২০২৫ ১৯:০৯

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে দুই পক্ষই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ শনিবার জানানো হয়েছে, এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের (আঙ্কটাড) সাবেক বাণিজ্যনীতি প্রধান ড. খলিলুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় খুব ভালো অগ্রগতি হয়েছে। উভয় পক্ষই দ্রুততার সঙ্গে চুক্তিটি চূড়ান্ত করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে।

এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও পরে এই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, যা আগামী ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি খসড়া চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের পাল্টা প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে, পারস্পরিক শুল্কের হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে, যা বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ছিল, বাংলাদেশকে তাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য আইন মেনে চলতে হবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে ঢাকা মনে করে।

শুল্কের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, বাংলাদেশ সরকার বাণিজ্য সম্পর্ক সহজ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ তাদের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে, সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চমূল্যে ৩ লাখ টন গম আমদানির জন্য সরকারি-বেসরকারি (জি টু জি) চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে বিমান কেনার পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে গত ১২ জুন একটি গোপনীয়তা চুক্তি (নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার শর্তাবলী প্রকাশ করা যাবে না। এরপর গত ১৭ জুন দুই দেশ একটি অনলাইন বৈঠকে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ২৯ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা এই চুক্তির প্রকৃতি ও সময় নির্ধারণে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য।