ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১


চলতি বছরেই লেনদেন হবে ১৫০০ কোটি টাকা


৭ অক্টোবর ২০২০ ১৬:১১

আপডেট:
৭ অক্টোবর ২০২০ ১৬:১৪

সুদহার কম থাকার কারণে ব্যাংকে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতের লাখ লাখ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসবে। এতে করে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, চলতি বছরের মধ্যেই তা দেড় হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে ডিএসই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিশনের মাত্র চার মাস সময় হলেও এরই মধ্যে বেশকিছু পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। যার ফল আপনারা ইতিমধ্যে দেখতে শুরু করেছেন। পুনর্গঠনের সব কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলে দুই বছরের মধ্যেই একটি আধুনিক পুঁজিবাজার দেখা যাবে। আর তিন বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটি বাজার আমরা উপহার দেব।

স্থায়ী আমানতের লাখ লাখ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে চলে আসবে বলে জানিয়ে এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, মানুষ যখন দেখবে এফডিআর এর ৫-৬ শতাংশের সুদ আয়ের চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে ১০ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তখন তারা এদিকে ঝুঁকবে। এতে করে সামনে বাজারে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য মিউচুয়াল ফান্ডে সুশাসন আনতে হবে। এ খাতটি আগামীতে ভালোভাবে চলার জন্য কাজ শুরু করছি।

 

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাজারে যদি গুড গভর্ন্যান্স তৈরি হয়, কোম্পানিগুলো যদি নিয়ম মেনে ডিভিডেন্ড দেয়, ইপিএস প্রকাশ করে, তাহলে বিনিয়োগকারীসহ দেশের উন্নতি হবে।

আমরা ডিএসইর আইটি ঠিক করতে অনুরোধ করেছি। আমরা বলেছিলাম এপিআই খুলে দিতে। কিন্তু তারা এখনো দেয়নিই। ওএমএস এবং এপিআই সুবিধা দিতে হবে। ডিএসইর ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে। যেন বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে বিনিয়োগকারী বা অন্য কেউ তা দেখতে পারে।

বাজারে ত্রুটি থাকলে এসইসি সেটা ধরে সংশোধনের কাজ করতে পারে। বাজারে বিভিন্ন সেক্টরের দাম বৃদ্ধি পাওয়া ও কমার বিষয় নিয়ে অনেকেই আমাদের ফোন করেন, ফেইসবুকে লেখেন, ই-মেইল করেন, চিঠি লেখেন। জানতে চান, এই সেক্টর কেন বাড়ছে, ওই সেক্টর কেন কমছে। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি কেনাবেচার দিকে নজর দিতে যাই, তাহলে বাজারে বিনিয়োগ করে শান্তি পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার টিকে থাকে বিনিয়োগকারীদের জন্য। তারা এখানে বিনিয়োগ করেন বলেই বিভিন্ন কোম্পানি এখান থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ পায়। এবং সেই অর্থ দিয়ে শিল্পায়ন হয়। এতে কোম্পানি যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি বিনিয়োগকারীরা লাভবান হচ্ছে। সর্বোপরি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দরকার। যারা আমাদের ওপর আস্থা রেখে এখানে বিনিয়োগ করছেন তাদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।

তিনি বলেন, ‘জেড’ ক্যাটাগরির সব কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কমিশন পৃথকভাবে মিটিং করেছে। কেউ কেউ ‘জেড’ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে অনেকেই বেরিয়ে আসবে। যৌথভাবে আলোচনার কারণে অনেকে বেরিয়ে আসছে। তবে ৫-৬টি কোম্পানির অবস্থা বেশি ভালো ছিল না। এগুলোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। এই কাজ শেষে ওটিসি মার্কেট নিয়ে বসব। সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করব।

কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে বাই ব্যাক আইন করবেন বলে জানিয়েছেন শিবলী রুবাইয়াত। তবে এরই মধ্যে ৫টি কোম্পানি ও ২টি ডিবেঞ্চার ডিলিস্টিং করার কথা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই ডিবেঞ্চার দুটি ২০-২৫ বছরের পুরনো। এতে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে ছিল। আমরা এসে সেগুলো খুঁজে ৫৭ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আইসিবি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্টের ভেতরে বেশকিছু ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এই সমস্যা কাটিয়ে আইসিবিকে দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে সরকারের কাছে সবকিছু তুলে ধরব।

ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসতে চাইলে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাজারে বিনিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ডিএসই পরিচালক মো. রকিবুর রহমান এক দিনে লেনদেন নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে করে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে দেওয়ার জন্য এসইসি চেয়ারম্যানের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমাদের মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের সেবা ও সন্তুষ্টির চেয়ে সঠিক পোর্টফোলিও দিয়ে বিনিয়োগ সুরক্ষা দেওয়া দরকার। বিনিয়োগকারীদের দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা যাবে না। এতে যত লাভই হোক, সার্ভিস চার্জ ও সুদে লাভের অংশ চলে যায়।

ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা হবে মত দিয়ে শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকে আমানত রেখে যে লাভ হয় তা থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে মুনাফা বেশি হবে। এক্ষেত্রে ১৫-২০ শতাংশ মুনাফা করা সম্ভব। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই উৎপাদনহীন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং বন্ধ হওয়া কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক। এছাড়া প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির, এসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ও ডিবিএ প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন।