ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১


পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক, চালে কমল


৯ জানুয়ারী ২০২১ ০৬:২৪

আপডেট:
৯ মে ২০২৪ ০৮:৪০

প্রায় চার মাস আগে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে করে সংকট কাটাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন মৌসুম থাকায় আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা তলানিতে, বিক্রিও কমে গেছে। আবার দেশি পেঁয়াজ আসায় দামও ধারাবাহিকভাবে স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দাম নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই দেশি চাষিদের নিরাপত্তা দিতে ও ইতিপূর্বে আমদানি করা পেঁয়াজের বাজারমূল্য নিশ্চিতে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

অপরদিকে চালের দামে ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে বিজি প্রেসে পেঁয়াজ ও চালের আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাজারে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে চালের দাম। চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানির অনুমতি দিয়েও উদ্দেশ্য সফল হয়নি। পরে আমদানি উৎসাহিত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে গত ২৭ ডিসেম্বর বিদ্যমান চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ শুল্ক কমিয়েও চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে চালের আমদানি শুল্ক আরও ১৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

অপরদিকে চার মাস আগে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। আগেরবার এমন পরিস্থিতি পেঁয়াজের দর উঠেছিল ২৫০ টাকার বেশি। এবার যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে থাকেন। ফলে আগেরবারের মতো ততটা অস্বাভাবিক দাম হয়নি। তবে পুনরায় ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ার পর লোকসানের মুখে পড়তে শুরু করেছেন ইতিপূর্বে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজে ভরে আছে দেশের ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারগুলো। দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। আড়তদাররা এখন আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রির জন্য ক্রেতা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজ এখনো পড়ে আছে বন্দরে।

অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ভারতের পেঁয়াজ আসা অব্যাহত থাকলে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে। এতে দেশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্কারোপের অনুরোধ জানিয়ে গত ৩ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সুরক্ষা দিতেই পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

ভারত থেকে রপ্তানি আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার কারণে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজের দাম উঠে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলায় সরকার টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলেন ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় তখন বড় বড় শিল্প গ্রুপ থেকে শুরু করে অন্য ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে ঝুঁকে পড়েন।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত চার মাসে বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পেঁয়াজ চলে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। আবার চার মাস পর পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় গত ২ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে ভারতীয় পেঁয়াজ। চীন, মিসর, তুরস্ক, ইউক্রেন, মিয়ানমার, হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজের পাশাপাশি এসব পেঁয়াজ চলে আসায় এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। এতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে ২০-৩০ টাকায় নেমে এসেছে।